পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ‌ুধু সাহিত্য হিসেবে পড়িয়ে যাওয়া হত। শশী পণ্ডিত যেতে না যেতে কবাটের বাইরে গান ও সেতারের মাস্টার ভীমবাবুর মুখসূর্য উদীয়মান হত। সতীশ পণ্ডিত তাঁকে গৃহমধ্যে অভ্যর্থনা করে ডেকে নিতেন। সতীশবাবুর পর্যবেক্ষকতায়ই আমাদের সব শিক্ষা চলত।

 গান শেখার হাতেখড়ি হয় আমাদের অব্জবাবুর কাছে, বিষ্ণুবাবুর পরে যিনি ব্রাহ্মসমাজের গায়ক হয়েছিলেন। অব্জবাবু তাল ও মাত্রা শেখানর জন্যে একটা কৌশল অবলম্বন করেন। একটা কালো বোর্ডে এই রকম ধরনের আঁক কেটে—স॥। আমাদের বুঝিয়ে দেন যে, সুরের পর যটা দাঁড়ি থাকবে, সুরটা মুখে গেয়ে পরে দাঁড়ির বদলে হাতে ততগ‌ুলি তালি দিতে হবে। দিদি দাদার একটু দেরি হল জিনিসটা ধরতে। আমি কি জানি কেমন সৌভাগ্যবলে তাঁদের আগেই সুরগ‌ুলো চটপট ঠিকঠাক গেয়ে, তালিগ‌ুলো হাতে ঠিকঠিক দিয়ে ফেল্লুম। অব্জবাবু ভারি খুশি হলেন। মার কাছে আমার ভাল রিপোের্ট গেল। রাজা সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের স্কুল থেকে আগত ভীমবাবুও আমায় ভাল মার্ক দিতে থাকলেন। খবরটা মায়ের কাছে পৌঁছাল। সেই পর্যন্ত আমার প্রতি মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ হল। এর মানে নয় যে, হৃদয় দিয়ে তাঁর হৃদয়ে বেশি যুড়লম। শ‌ুধু শিক্ষা সম্বন্ধে কোন কোন বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎ পরিদর্শকতার গণ্ডির ভিতর এলুম। একটি পিয়ানো বাজনা বাইরের তেতালায় মায়েরই বসবার ঘরে থাকত। শ‌ুধু আমাকে শেখানর জন্যে একজন পিয়ানো শিক্ষয়িত্রী মেম হপ্তায় দুদিন করে নিযুক্ত হলেন। মায়ের ঘরে গিয়েই শিখতুম। মেম যতক্ষণ শেখাতেন বেশ লাগত, কিন্ত‌ু মা একটা কঠিন নিয়ম করলেন যে, শেখান জিনিসটা রোজ এক ঘণ্টা করে তাঁর ঘরে বসে প্র্যাকটিস করতে হবে—সেইটে বড় নীরস বোধ হতে লাগল। বাজিয়ে বাজিয়ে আঙুল ব্যথা হয়ে যায়, মন শ্রান্ত হয়ে যায়, ঘণ্টা আর শেষ হয় না। এই বিপদে সুপ্রভাদিদি এলেন আমায় বিপদ থেকে উদ্ধারকর্ত্রী হয়ে।

 সুপ্রভাদিদি এ বাড়ির মধ্যে একটি ব্যক্তিত্বশালিনী কন্যা। সেজ মাসিমার ছেলেমেয়েরা পড়াশ‌ুনার বেশি ধার ধারতেন না। সেকালের ‘চারুপাঠে’র উপরে আর উঠেছিলেন কি না সন্দেহ। কিন্ত‌ু জাগতিক অনেক বিষয়ে সুপ্রভাদির অশিক্ষিত পাণ্ডিত্য ও অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। সর্বনীচের তলার বামুন ও দাসী মহল থেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চতলার বড়দের মহলে কি ঘটছে না ঘটছে, সে সবের খবর তিনি রাখেন। সারা

১৭