পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাইরের তেতালাতেই থাকত—আমাদের তিনজনের সঙ্গে বাড়ির ভিতরে নয়। নিঃসন্তান নতুন মামীরই মেয়ে যেন সে। শুধু, আমরা যখন ইস্কুলে যেতে লাগলুম তাকেও আমাদের সঙ্গে ইস্কুলে পাঠান হল। এক পাল্কীতে চড়ে যাওয়ার সেই সময়ে মাত্র তার সঙ্গে আমাদের যোগ। তার সঙ্গে আর কোন সংস্রব আমার মনে পড়ে না। আমার চেয়ে দু বছরের ছোট সে। ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার দুই এক মাস পরেই একদিন নতুন মামীর ছাদের বাঁকা সিড়ি দিয়ে গোলাবাড়ির দিকে আপনাআপনি নামতে গিয়ে নীচে পড়ে গিয়ে brain concussionএ মৃত্যু হয় তার। বাবামশায় তখন বিলেতে।

 সারা বাড়িতে সেদিন এক ঘোর কালোছায়া। মা উপরে আছেন, আমাদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি—আমাদের উপরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেদিন শুধু সতীশ পণ্ডিত আমাদের আগলিয়ে বসে আছেন। বাড়ির অন্য ছেলেমেয়েরা সেদিন খেলতে আসেনি—সবাই নিজেদের ঘরে ঘরে আছে। পণ্ডিতমশায়ের উপর ভার দেওয়া হয়েছিল আমাদের নানা কথায় ভুলিয়ে রাখা, মৃত্যু জিনিসটা যে কি তা না জানতে দেওয়া। ঊর্মিলা কোথায় বেড়াতে গেছে—এই বলা হল আমাদের। আর যে কখনও ফিরবে না তা অনেক দেরীতে ক্রমে ক্রমে উপলব্ধি করলুম।

॥ চার॥
ইস্কুল

আমি সাড়ে সাত বছরে বেথুন ইস্কুলে ভর্তি হই সব নীচের ক্লাসে—আর ক্লাসের মধ্যে সব চেয়ে ছোটও আমি। লজ্জাবতী—রাজনারায়ণ বসুর ছোট মেয়ে—আমার চেয়ে বয়সে অন্তত চার বছরের বড়—সেও ঐ ক্লাসে। আমি তার ভারি স্নেহ ও যত্নের একটি পুতুল হলুম। ইস্কুলে বছরের পর বছর ক্লাসের পর ক্লাসে সকলের প্রিয় হতে থাকলুম। ক্রমে এমন হতে লাগল এক এক ব্যাচের পর ব্যাচে এক একটি মেয়ে আমার ঘোরতর প্রেমিকা হতে থাকল। যখন বাড়ির গাড়ি বন্ধ হয়ে আমাদের ইস্কুলের বাসে যাতায়াত হল—“সরলা দিদির” বইখাতা কে তাঁর হাত থেকে

২২