পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মেজ মামী বিলেত থেকে ফিরলে আর এক দিদিমার বাড়ি—তাঁর মায়ের বাড়ি যাতায়াত আমাদের ধরলে—তাঁরই ছেলেমেয়ের সঙ্গে। সে কথা পরে বলব।

 ইস্কুলে পড়াশুনায় যে আমি খুব নিবিষ্টমনা ছিলুম তা নয়। তবে বাড়ির থেকে পণ্ডিত মশায়ের কাছে একদফা পড়া তৈরি করে আসায় ক্লাসে মোটের উপর ভালই থাকতুম। ইস্কুলে যাবার পর পড়াশুনার মধ্য দিয়ে মার সঙ্গে আমার একটু যোগাযোগ আরম্ভ হল। এই সময়কার একটি কথা মনে পড়ে। একদিন ইংরেজী grammar-এ আমার বিদ্যার দৌড় পরীক্ষা করছিলেন মা। Common noun ও Proper noun-এর প্রভেদ কি তার দৃষ্টান্তস্বরূপ জিগ্যেস করলেন—‘‘‘গঙ্গা’ Common noun না Proper noun?” আমি বল্লুম—‘‘Common noun’’! সরোজাদিদির স্বামী মোহিনীবাবু তখন সেই ঘরে ছিলেন, তিনি মার সঙ্গে সঙ্গে বল্লেন—“এই ত তাহলে কিচ্ছু বোঝনি? ভুল বল্লে।”

 আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলুম, নিশ্চয় জানি আমার ভুল হয়নি। অসহায়ভাবে বল্লুম—“কেন? ভুল কোথায়? গঙ্গা ত নদী, তাইত Common noun।”

 দাসীদের কথায়বার্তায় ‘গঙ্গা’ শব্দ যে ‘নদী’রই পারিভাষিক, যে-সে-নদীই যে গঙ্গাপদবাচ্য এই ধারণাই আমার মনে বসা ছিল। সেটা আমি কিছুতেই মাদের বোঝাতে পারছিলুম না। তাই তাঁরা যখন বল্লেন—‘ভুল’ আমার মন বলতে লাগল, “বাঃ, আমি যেটা ঠিকই বল্লুম—তাঁরা বল্লেন ‘ভুল’!”

 বিয়ের পর পঞ্জাবে গিয়ে দেখলুম, সেখানেও মেয়েরা গঙ্গা-শব্দ ‘নদী’মাত্রের পরিকল্পে ব্যবহার করেন। তাই গঙ্গা Common noun ও Proper noun দুই-ই। আমিও ভুল বলিনি, আমার গুরুজনেরাও আমার ঠিককে ভুল বলায় ভুল করেননি।

 পড়াশুনায় নিতান্ত মন্দ না হলেও সেলাইয়ে আমার রুচি মোটেই ছিল না। সে বিষয়ে ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে পরজীবনে নিজেই খুব ফাঁকিতে পড়েছি। মনে পড়ে সেলাইয়ের ঘণ্টা পড়লে Gallery ঘরে গিয়ে সবাই সেলাই হাতে নিয়ে বসত। আমিও Gallery-র সর্বোচ্চ থাকে গিয়ে বসতুম, কিন্তু খালি গল্প করতুম, সেলাই বিশেষ করতুম না। একদিন পাশের মেয়ের সঙ্গে খুব গল্প জমিয়ে দিয়েছি, হঠাৎ চুপচুপ করে উঠে এসে সেলাইয়ের শিক্ষয়িত্রী মিস্‌ মুখার্জি অতর্কিতে ঠাস করে আমার

২৫