পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উদারা মুদারা তিনটে গ্রামে ছড়ান কর্ডের বহুস্বরের বৈচিত্র্যের ভিতর থেকে আসল সুরটির উঁকিঝুকি ধরে ফেলে বিস্ময়ামোদিত হবে।

 ইংরেজী বিধানে সপ্তাঙ্গে সম্পূর্ণ সেই বাজনাখানি আমার মাথায় স্তরে স্তরে লেখা ছিল। কাউকে শোনাতে গেলেই সবটা মনের থেকে হাতে বেরিয়ে এসে বাজত। রবিমামা খাতাখানি দিয়ে বল্লেন—“এইতে লিখে রাখ, ভুলে যাবি।”

 লেখা হল, কিন্তু ভোলাও হল। কেননা সে খাতাখানি গেছে হারিয়ে—আমার জীবনের সবই কিছু যেমন হারানর তহবিলে গেছে চলে।

 তারপরেও “চিনি গো চিনি বিদেশিনী” প্রভৃতি অনেকগুলি রবীন্দ্রগান এবং “হে সুন্দর বসন্ত বারেক ফিরাও” প্রভৃতি দুই-একটি নিজের গানও আমার হাতে সেই রকমে য়ুরোপীয়ান্বিত হয়েছিল। অস্তরটি এদের একহারা দিশী সুর, বাইরের শরীরটি তাদের উচ্চ নীচ নানা সপ্তকে নানা সুরের অবিসম্বাদী মিলনময় একটি রূপ। এ সব গান শেখান এবং গাওয়ানও হয়েছে অনেকবার অনেক সঙ্গীত সভায়। ইংরেজী স্বরলিপি প্রথায় লেখার শ্রমও করেছেন মেজমামার কন্যা ইন্দিরা দেবী, কিন্তু বই করে কোনদিন ছাপান হয়নি। ছাপাখানার সুযোগের অভাবে, কিম্বা আমার ভিতর থেকে সে বিষয়ে দুর্দমনীয় আগ্রহের ও চেষ্টার অভাবে।

 কিশোর বয়স পর্যন্ত আমরা থাকি বড়দের হাতে সল্‌তের মত। ভিতরে ভিতরে জ্বলার ধর্ম থাকলেও তাঁরা উস্কে না দিলে সব সময় বাইরে জ্বলিনে। আর জ্বলাটা যদি অভ্যাসগত না হয়ে যায়—অভ্যাসটা যদি একবার পার হয়ে যাওয়া যায়, পরে আর নিজেকে নিজে বাইরে জ্বালানর উদ্যম আসে না। আমার বিধাতা আমার পিতামাতাকে সঙ্গীতে বা সাহিত্যে কোনদিকে আমার আত্ম-অভিব্যক্তিকে বাইরে উস্কানর কাজে নিযুক্ত করেননি, তাদের মুদ্রাঙ্কনের বিষয়ে উৎসাহ ও উদ্যোগময় করেননি। তাই আজ পর্যন্ত আমার সব লেখাই প্রায় ভারতী’র পৃষ্ঠাতেই নিবদ্ধ এবং গানগুলি আমার খাতায় বা গায়কদের মুখে মুখে। আমার লেখা-কুমারীরা মাসিকে সাপ্তাহিকে দৈনিকে ছাপাসুন্দরী হয়েছে কিন্তু গ্রন্থের ঘরণী হয়নি—মাত্র গুরুদাস চাটুয্যে কোম্পানীর আট আনার এডিশনে ছাপান “নববর্ষের স্বপ্ন” নামে কতকগুলি ছোট গল্প, বড় বড় সভাসমিতিতে ভাষিত ইংরেজী ও বাঙ্গলা বক্তৃতা, ‘বঙ্গের বীর’ সিরিজের দুখানি পুস্তিকা ও ইদানীংকার দুয়েকটি আধ্যাত্মিক বিষয়ের বই ছাড়া।

৩২