পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাহোর থেকে দু-একবার আগেকার লেখাগুলি বই আকারে ছাপাবার চেষ্টা করে ব্যর্থশ্রম হয়েছি। ‘কবিমন্দির’ প্রভৃতি দুতিন ফর্মা ছেপে, প্রেসওয়ালাদের পকেটে টাকা ভরে রুদ্ধশ্বাস হয়ে গেছে।

 প্রাণের গভীরে আমার যে সুরদেবতা অধিষ্ঠিত ছিলেন তাঁকে নিত্য হবিঃ দানে তাঁর পুষ্টিসাধনা করে তাঁর দ্বারা আমারও পুষ্টিবিধানের হোতা হলেন রবিমামা। আমি গানের বাতিকগ্রস্ত ছিলুম। যেখান সেখান থেকে নতুন নতুন গান ও গানের সুর কুড়তুম। রাস্তায় গান গেয়ে যাওয়া বাঙ্গালী বা হিন্দুস্থানী ভিখারীদের ডেকে ডেকে পয়সা দিয়ে তাদের কাছে তাদের গান শিখে নিতুম। আজও সে ঝোঁক আছে।

 কর্তাদাদামহাশয় চুঁচড়ায় থাকতে তাঁর ওখানে মাঝে মাঝে থাকবার অবসরে তাঁর বোটের মাঝির কাছ থেকে অনেক বাউলের গান আদায় করেছিলুম। যা কিছু শিখতুম তাই রবিমামাকে শোনাবার জন্যে প্রাণ ব্যস্ত থাকত—তাঁর মত সমজদার আর কেউ ছিল না। যেমন যেমন আমি শোনাতুম—অমনি অমনি তিনি সেই সুর ভেঙ্গে, কখনো কখনো তার কথাগুলিরও কাছাকাছি দিয়ে গিয়ে এক একখানি নিজের গান রচনা করতেন। “কোন্‌ আলোকে প্রাণের প্রদীপ”, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে”, “আমার সোনার বাংলা” প্রভৃতি অনেক গান সেই মাঝির কাছ থেকে আহরিত আমার সুরে বসান।

 মহীশূরে যখন গেলুম সেখান থেকে এক অভিনব ফুলের সাজি ভরে আনলুম। রবিমামার পায়ের তলায় সে গানের সাজিখানি খালি না করা পর্যন্ত, মনে বিরাম নেই। সাজি থেকে এক একখানি সুর তুলে নিলেন তিনি, সেগুলিকে মুগ্ধচিত্তে নিজের কথা দিয়ে নিজের করে নিলেন—তবে আমার পূর্ণ চরিতার্থতা হল। “আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে”, “এস হে গৃহদেবতা”, “এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ”, “চিরবন্ধু, চিরনির্ভর” প্রভৃতি আমার আনা সুরে বসান গান।

 আমার সব সঙ্গীতসঞ্চয়ের মূলে তাঁকে নিবেদনের আগ্রহ লুকিয়ে বাস করত। দিতে তাকেই চায় প্রাণ, যে নিতে জানে। বাড়ির মধ্যে শ্রেষ্ঠ গ্রহীতা ছিলেন রবিমামা, তাই আমার দাত্রীত্ব পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছিল তাঁতে।

 “বন্দে মাতরম্‌”এর প্রথম দুটি পদে তিনি সুর দিয়েছিলেন নিজে। তখনকার দিনে শুধু সেই দুটি পদই গাওয়া হত। একদিন আমার উপর ভার দিলেন—“বাকী কথাগুলতে তুই সুর বসা।” তাই “ত্রিংশকোটিকণ্ঠ

৩৩