পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কলকলনিনাদ করালে” থেকে শেষ পর্যন্ত কথায় প্রথমাংশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমি সুর দিলুম। তিনি শুনে খুশী হলেন। সমস্ত গানটা তখন থেকে চালু হল।

 আমার সাহিত্যগত রুচিও গড়ে দিয়েছিলেন রবিমামা। ম্যাথু আর্নল্ড, ব্রাউনিং, কীটস্‌, শেলি প্রভৃতির রসভাণ্ডার যিনি আমার চিত্তে খুলে দেন—সে রবিমামা। মনে পড়ে দার্জিলিঙের ‘Castleton House’এ যখন মাসকতক রবিমামা, মা, বড়মাসিমা, দিদি ও আমি ছিলুম—প্রতি সন্ধ্যাবেলায় Browningএর “Blot in the Scutcheon” মনে করে করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়ে শোনাতেন। Browning-এর সঙ্গে আমার সেই প্রথম পরিচয়। সেই সময় পিঠে একটা ফোড়ায় যখন শয্যাশায়ী তখন শুয়ে শুয়ে ‘‘মায়ার খেলা” গীতিনাট্য রচনা আরম্ভ করেন। প্রতিদিন একটি দুটি করে গান রচনা করতেন ও সঙ্গে সঙ্গে আমায় শিখিয়ে দিতেন।

ছয়

রবীন্দ্র-বঙ্কিম বিতর্ক

রবিমামার সঙ্গে ছেলেবেলায় একটি সভায় যাওয়া আমার মনে পড়ে। জীবনে এই প্রথম সভ্যগমন। কি excitement, কি উদ্দীপনা আমাদের—সুরেন বিবি সুধীদাদা বলুদাদারাও আছেন। সভাটি আদি ব্রাহ্মসমাজের হলে আহূত। উদ্দেশ্য সে সভায় বঙ্কিমের একটি মতের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের তীব্র প্রতিবাদ পাঠ। বঙ্কিমের যশ ও কীর্তি তখন মধ্যাহ্ন গগনে সমুদিত আর রবি সবেমাত্র উদীয়মান। লোকদের মধ্যে একটা হলচল পড়ে গেল। রবীন্দ্রনাথের নাম তখন তাঁর গানের ভিতরে রবিছায়াতেই প্রায় নিবদ্ধ। এই বক্তৃতায় যে ওজস্বী গদ্যে, যে যুক্তিতর্কে তাঁর শ্রোতাদের মন আকৃষ্ট করলেন তা ইতিপূর্বে তাঁর সম্বন্ধে অভাবনীয়।

 সংক্ষেপে ব্যাপারটি এই—রবীন্দ্রনাথের প্রতিপাদ্য এই যে, মিথ্যা কোন অবস্থাতেই কোন সময়েই কথনীয় নয়। এ বিষয়ে ধর্মশাস্ত্রকারকৃত

৩৪