পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বই উপহার-অপ্রত্যাশিত স্নেহ-নিদর্শন। তাঁর হস্তলিপিযুক্ত সে বই-গুলিও রাখতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। বঙ্কিম-রসলোলুপ পঞ্জাব-প্রবাসী বাঙালী বন্ধু, ও আগন্তুকেরা সেগুলি আমার লাইব্রেরীতে দেখে ধার চাইতেন পড়ার জন্যে। বই ধার নিয়ে ফিরিয়ে দেন কটা লোকে সেটার হিসেব কেউ করেছেন? এবিষয়ে দেশকাল জাতিভেদ নেই। প্রসিদ্ধ ডাক্তার কর্নেল ডেন্হাম হোয়াইটের পত্নীর কাছে গল্প শুনি তাঁদের এক বন্ধুর কবরের উপর এই স্তুতিলিপি খোদিত হয়েছিল—“He returned books”—“তিনি বই ফিরিয়ে দিতেন।” আমার কাছ থেকে বঙ্কিমের বই পড়তে নেওয়া কোন বন্ধই তাঁদের কবরে ঐ স্কুতিলিপি খোদিত হওয়ার যোগ্যতা দেখাননি। কাজেই বইগুলি একে একে আমার হগুচ্যুত হতে হতে একেবারে অন্তর্ধান হল।

 চিঠি ও বই উপহারের পর তিনি আমন্ত্রিত হয়ে এলেন একদিন আমাদের বাড়িতে। মানুষ বঙ্কিমের সঙ্গে আমাদের সংস্পর্শ আরম্ভ হল। মনে পড়ে তিনি চা-ভক্ত ছিলেন, আর আমার পিতা ছিলেন চায়ের একজন মর্মজ্ঞ। আমাদের বাড়ির চা বঙ্কিমের সুস্বাদু বোধ হল। তার পরদিন সেই চায়ের এক প্যাকেট এক গোচ্ছা গোলাপ ফুলের সঙ্গে তাঁর কাছে উপঢৌকন গেল। কোথায় বঙ্কিমের এক সেট বই—আর কোথায় দার্জিলিংয়ের এক প্যাকেট চা। কিন্তু দুইয়েরই পশ্চাতে প্রেরক ছিল যে দুটি ভাব—স্নেহ ও ভক্তি-তারা বোধ হয় সমানই অমূল্য।

 তিনি সেদিন আমায় ফরমাল করে গিয়েছিলেন তাঁর “সাধের তরণী” গানটিতে সুর বসাতে। থিয়েটারে দেওয়া সুর তাঁর পছন্দ হয়নি বললেন। সেটা শুনতে এলেন আর একদিন —শুনে খুব খুশী হয়ে গেলেন। বঙ্কিমের ফরমাসী এই গানের স্বরলিপি “শতগান” গ্রন্থে দেওয়া আছে।

 তারপরে আমাদের - আমার মাকে ও আমাকে - দিদি তখন বিয়ে হয়ে নিজের বাড়িতে থাকেন - নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়ি একদিন। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রপাত হল। বঙ্কিমের স্ত্রীর সহিত বা তাঁর সম্পর্কীয় কথাবার্তায় একটি প্রীতিময় হাসিকৌতুকের ঢেউ খেলিয়ে যেত। আমরা যেন তাঁর নভেলেরই একটা দৃশ্যর মধ্যে পড়ে যেতুম। দুই দৌহিত্র দিব্যেন্দু ও পূর্ণেন্দুর সঙ্গে সপত্নীক বঙ্কিমের শুভাগমন অনেকবারই হতে থাকল আমাদের কাশিয়া-বাগান বাগানবাড়িতে।

 যে বাড়িতে শুধু বঙ্কিমের নয়, আমার ভক্তির টানে বিদ্যাসাগর

৪৬