পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 “বন্দে মাতরম্” শব্দটি মন্ত্র হল সব প্রথম যখন মৈমনসিংহের সুহৃদ সমিতি আমাকে স্টেশন থেকে তাদের সভায় প্রোসেশন করে নিয়ে যাবার সময় ঐ শব্দ দুটি হংকার করে করে যেতে থাকল। সেই থেকে সারা বাঙলায় এবং ক্রমে ক্রমে সারা ভারতবর্ষে ঐ মন্ত্রটি ছড়িয়ে পড়ল—বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে যখন গবর্নর সাহেবের অত্যাচার আরম্ভ হল আহিমালয়কুমারিকা পর্যন্ত ঐ বোলটি ধরে নিলে।

 আমার বিয়ের পর গোখলের সভাপতিত্বে বেনারস কংগ্রেসে প্যাণ্ডালের দোতলায় মেয়েদের মঞ্চে আমি উপবিষ্ট ছিলুম। আমার পাশে ছিলেন লেডি অবলা বসু। হঠাৎ সভা থেকে গোখলের কাছে অনুরোধ গেল আমাকে দিয়ে “বন্দে মাতরম্” গাওয়ানর জন্যে। গোখলে পড়লেন বিপদে। তার কিছু আগে বাঙলাদেশে কোথাও কোথাও ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা “বন্দে মাতরম্” সভাসমিতিতে গাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। তিনি সাবধানপন্থী। গবর্নমেণ্টের সঙ্গে ভাব রেখে কাজ করতে চান, গবর্নমেণ্টের আদেশের বিরুদ্ধে কিছু করতে চান না। কিন্তু কি করবেন? ভারতের সর্বপ্রদেশ থেকে সমাগত প্রতিনিধিদের “বন্দে মাতরম্” শোনার তীব্র ইচ্ছা কিছুতেই নিরোধ করতে পারলেন না। তখন গোখলে আমার কাছে একটি ক্ষুদ্র লিপি পাঠালেন গাইতে অনুরোধ করে—সঙ্গে সঙ্গে লিখলেন,—সময় সংক্ষেপ, সুতরাং দীর্ঘগানের সবটা না গেয়ে ছেঁটে গাই যেন। কোন্ অংশটা ছাঁটা তাঁর অভিপ্রেত ছিল জানি নে, আমি মাঝখানে একটুখানি ছেঁটে চট করে “সপ্ত কোটির” স্থলে “ত্রিংশ কোটি” বলে সমগ্রটা গাওয়ারই ফল শ্রোতাদের কাছে ধরে দিলুম, তাঁদের প্রাণ আলোড়িত হয়ে উঠল। ভারতের প্রান্ত প্রান্ত থেকে সমাসীন দেশভক্তদের মধ্যে আজও যাঁরা জীবিত আছেন—সেদিনকার গান ভুলতে পারেননি।

 আজ কংগ্রেস “High Command” থেকে কাটাছাঁটা “বন্দে মাতরম্” গাওয়ার হুকুম বেরিয়েছে। তা হোক্। হালফ্যাশনের ছাঁটা কুন্তলেও “বন্দে মাতরম্” তার তেজ ও দীপ্তিরসে ঢল ঢল করছে।

 যেদিন বঙ্কিমের মত্যু সংবাদ হঠাৎ কানে এল—মনে হল আমারই জীবনের একাংশ খসে গেল।

৪৮