পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়ে পড়লুম। বন্ধুটি হচ্ছে হেমপ্রভা—জগদীশ বসুর ছোট বোন। বলেছি শনি রবিবারে মাঝে মাঝে সে স্কুলের বোর্ডিং থেকে আমাদের বাড়িতে আসত। দুদিন আমাদের কাছে থেকে আবার সোমবারে আমাদের সঙ্গে স্কুলের বোর্ডিংয়ে ফিরে যেত।

 জগদীশ বসুর পিতা ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট ভগবান বসু ছিলেন ব্রাহ্ম। তাঁর সর্বজ্যেষ্ঠা কন্যা স্বর্ণপ্রভা ছিলেন ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসুর পত্নী। দ্বিতীয়া কন্যা সুবর্ণপ্রভা ছিলেন তাঁরই অনুজ ডাক্তার মোহিনীমোহন বসুর পত্নী। তার পরের তিনটি কন্যা অনূঢ়া, তাঁদের মধ্যে লাবণ্যপ্রভা বড়। এঁরা তিনজনেই মফঃস্বল থেকে এসে বেথুন স্কুলের বোর্ডিংয়ে ভতি হন। কাদম্বিনী বসু (পরে গাঙ্গুলী), কামিনী সেন (পরে রায়), অবলা দাস (পরে বসু) ও কুমুদিনী খাস্তগিরি (পরে দাস) এবং শিবনাথ শাস্ত্রী মশায়ের কন্যা হেমলতা (পরে সরকার) প্রভৃতি ব্রাহ্মসমাজের বড় বড় মেয়েরাই উপরের দিকের ক্লাসে ছিলেন। কিন্তু জগদীশ বসুর ভগ্নীদের আবির্ভাবে ব্রাহ্ম পরিবারের একটা বিশেষত্ব স্কুলে বেশী করে ফুটে উঠল—একটা সহজ স্বাধীন গতিবিধির ভাব, পড়াশুনায় মার্জিত রুচি, এবং কোন কোন বিষয়ে ইংরেজিয়ানার বিশেষ অনুবর্তন। সেকালের ব্রাহ্মরা জীবনের কতকগুলি অনুষ্ঠানে একেবারে ইংরেজী ধাঁচা অবলম্বন করেছিলেন। সমাজে তাঁদের উপাসনা মাতৃভাষায় না হয়ে অনেক সময়ে ইংরেজীতে হত; বিবাহের সময় কনের বসন সাদা রঙের হত। গাউন না পরে শাড়ি পরলেও ইংরেজদের অনুকরণে কনে শাড়ির উপর আমস্তকপাদ একটি সাদা নেটের veil বা অবগুণ্ঠনে আবৃত হতেন, তাতে ‘অরেঞ্জব্লসম্’ অর্থাৎ কমলানেবুর ফুল লাগান থাকত এবং bride বা কনের পিছনে brides-maids বা কনের পশ্চাৎচারিণী একই রকম সাজে সাজা দুচারটি কুমারী বালিকাদের শোভাযাত্রা অবশ্যকর্তব্য হত। আমি দুটি ব্রাহ্ম বিবাহে brides-maid হই—এক শিবনাথ শাস্ত্রীর জ্যেষ্ঠা কন্যা হেমের বিয়েতে—আর এক দুর্গামোহন দাসের কনিষ্ঠা কন্যা খুসীর বিয়েতে। হেমের বিয়ে হল ইংরেজদের church বিয়ে হওয়ার মত—সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মন্দিরে। হেম প্রায় সাদা ক্রীম রঙের শাড়ির উপর আগাগোড়া ইংরেজী রকমে veilএ আচ্ছাদিত। কিন্তু খুসীর বেলায় ব্রাহ্মদের ঘোরতর ইংরেজী অনুকরণ-প্রিয়তা অনেকটা শিথিল হয়ে এসেছে। খুসী আমাদের সঙ্গে খুব বেশী রকম মিশে গিয়েছিল। সে তার বিয়েতে সাদা রঙের রেশমী শাড়ির পরিবর্তে সনাতন লাল বেনারসী

৫০