পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সে বইখানির নাম—“Lamplighter”—চমৎকার বই। জানি না আজকালকার মেয়েরা সে বই পড়েছে কিনা। সেই পর্যন্ত নিজের জন্মদিন সম্বন্ধে আমার মনে একটা জাগ্রতি এল। আর সেটা পুষ্ট করলেন আমার দিদি হিরন্ময়ী। আমাদের নিজস্ব পারিবারিক সংহত জীবনের কর্তা তিনি। পরিবারের মধ্যে আমার নিজের সম্বন্ধে একটা ন্যূনতা জ্ঞান সদা বর্তমান ছিল। দিদির ছিল না। তিনি মা-বাপের আদরে বর্ধিত। নিজে ও নিজের মা-বাবা, ভাইবোনরা যে কেউকেটা নয় এমনি একটা হামবড়াইতে ভরা ছিলেন। যোড়াসাঁকো ছেড়ে কাশিয়াবাগানে এলে তিনি ভাইবোনদের ও মায়ের জন্মদিন উৎসব প্রবর্তন করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও তাঁর করতে থাকলুম। হয়নি শুধু বাবামশায়ের, কারণ তিনি তাঁর জন্ম মাস, বৎসর, তিথি বা তারিখ জিজ্ঞেস করলেও বলতেন না।

 আমার ষোড়শ জন্মদিনের কথা বেশ মনে পড়ে। লম্বা খাবার টেবিলে নানারকম মিষ্টান্ন ফল ফলু সাজান—মাঝখানে একটা ঝকঝকে রূপার থালার উপর একটি বড় কেকের পাশে পাশে গোল করে ষোলটি মোমবাতি দীপ্যমান। আজ যত বছরের হলুম, এ গৃহে ততগুলি দীপ জ্বলে উঠল আজ—এই সুন্দর ইংরেজী প্রথাটির অনুসরণ দিদির নতুনত্ব—যতদূর মনে পড়ে মেজমামীও কোনদিন এটা করেন নি।

 মেজমামা বিলেত হয়ে আসার পূর্বে যোড়াসাঁকোয় কারো জন্যেই ‘জন্মদিন’ করান হত না বলেছি। আজ যে দেশব্যাপী রবীন্দ্র-জন্মদিন অনুষ্ঠান, তাও মেজমামীদের সঙ্গে রবিমামা ফেরার পরও সেকালে যোড়াসাঁকোয় কোনদিন হয়নি। সেটি ধরালাম আমি আমার ভক্তিপ্রাবল্যে। তখন তিনি ও নতুন মামা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ থাকেন মেজমামীদের সঙ্গে ৪৯নং পার্ক স্ট্রীটে। এ বিষয়ে পূর্বে যা লিখেছি, তার থেকে উদ্ধৃত করছি—“রবিমামার প্রথম জন্মদিন উৎসব আমি করাই। তখন মেজমামা ও নতুনমামার সঙ্গে তিনি ৪৯নং পার্ক স্ট্রীটে থাকেন। অতি ভোরে উল্টাডিঙির কাশিয়াবাগান বাড়ি থেকে পার্ক স্ট্রীটে নিঃশব্দে তাঁর ঘরে তাঁর বিছানার কাছে গিয়ে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা ও বাজার থেকে আনান বেলফুলের মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধুতি-চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাঁকে জাগিয়ে দিলুম। তখন আর সবাই জেগে উঠলেন—পাশেই নতুনমামার ঘর। “রবির জন্মদিন” বলে একটি সাড়া পড়ে গেল। সেই বছর থেকে পরিজনদের মধ্যে তাঁর জন্মদিনের উৎসব আরম্ভ হল।

৫২