পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুজরাটি, মারাঠী, পার্শী, সিন্ধীদের কাছ থেকে অনেক কিছু সংগ্রহ করে আনতেন। মেজমামা যখন ছুটিতে বাড়ি আসতেন, বাড়িশুদ্ধ ছোট ছেলেমেয়েদের জন্যে খেলনা সঙ্গে করে আনতেন। সব সাজিয়ে রাখা হত একটা জায়গায়, যার যেটা পছন্দ তুলে নিত, কোন বাধানিষেধ থাকত না। আমার মনে পড়ে, একটি খুব বড় মোমের পুতুলের জন্যে আমি লুব্ধ হই। কিন্তু পেতে পারি বলে ভরসা ছিল না, হাত বাড়িয়ে তুলে নিতে সাহস হচ্ছিল না। মেজমামার সঙ্গে বড়দের আর একজন কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমি চুপ করে সব খেলনার দিকে চেয়ে আছি দেখে জিজ্ঞেস করলেন—“কোন্‌টা চাই তোমার?” আমি নীরবে পুতুলটার দিকে দেখালুম। মেজমামা তৎক্ষণাৎ সেটা তুলে আমার হাতে দিলেন। তাই তাঁর ছুটিতে বাড়ি আসার জন্যে আমরা ছোটরা সবাই উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকতুম।


॥ নয় ॥
দিদি

দিদি হিরন্ময়ীর স্মৃতি আমার মনে একটি সুবাসের মত ভরা আছে। যেমন হাসানুহানা গাছের কাছ দিয়ে গেলে সন্ধ্যাবেলা একটা সুবাস বয়ে আসে, যেমন যুঁই বেল ক্ষেতের হাওয়া ভোরের বেলায় একটি সুবাসস্নিগ্ধতা আনে—ঠিক তেমনি যেন। তাঁর রক্তচর্মের শরীরটি ছেড়ে ভিতরকার স্নেহ-ভক্তি-প্রীতিময়তার সুবাসই তাঁকে আমার মনে জাগরূকে রেখেছে।

 কাশিয়াবাগানে এসে অবধি দিদিই আমাদের পরিবারের কর্ণধার হন। তাঁর আমাদের জন্মদিনের উৎসব প্রবর্তনের কথা বলেছি। অন্য অনেক রকমেও তিনি যেন বড়-ছোট সকলের অভিভাবিকা হলেন। ভক্তি-প্রীতি-সেবায় তাঁর সহজ তৎপরতা রোজ দেখা দিতে লাগল। যেমন মায়ের প্রতি তেমনি বাবামশায়ের প্রতিও কি যত্ন ছিল তাঁর। একটা পুরানো চাকর—আমাদের ঠাকুরদাদার আমলের—একবার বাবামশায়ের কাছে কি লাগিয়ে দিদির সঙ্গে বাবামশায়ের একটু মনান্তর সাধন করে।

৫৫