পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিছু করত, বলত। বৌঠান কোন কোন দিন তাকে আদেশ দিতেন—“হিমালয়ে চলে যাও, সেখান থেকে ঘুরে এস।” সে খানিকক্ষণ পরে যেন অত্যন্ত শীতার্ততা প্রকাশ করত। ক্রমে বাড়িশুদ্ধ সকলে বৌঠানকে এই বশীকরণক্রিয়া থেকে নিরস্ত করতে লাগল। ইচ্ছাশক্তির এরূপ অযথা অপব্যয়ে নিজের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা।

 মাদাম ব্লাভাটস্কির প্রতি শ্রদ্ধায় যখন মান্দ্য পড়ল, থিয়সফির দল ভঙ্গ হল, তখন থিয়সফির সূত্রেই যাঁদের সঙ্গে পরিচয় আরম্ভ হয়েছিল, সেই সব মহিলাদের নিয়ে ‘সখি-সমিতি’ নাম দিয়ে মা একটি সমিতি স্থাপন করলেন। ‘সখি-সমিতি’ নামটি রবিমামার দেওয়া। কুমারী ও বিপন্না বিধবাদের বৃত্তি দিয়ে পড়ান, পড়া সাঙ্গ হলে তাদের শিক্ষয়িত্রীরপে বেতন দিয়ে অন্তঃপুর-মহিলাদের শিক্ষার জন্যে নিযুক্ত করা, মফঃস্বলে ধর্ষিতা নারীদের জন্যে প্রয়োজন হলে উকিল ব্যারিস্টার নিযুক্ত করে মোকদ্দমা চালান, বাঙলার বিভিন্ন জেলা থেকে শিল্প সংগ্রহ করে মেলা করা, তাতে মেয়েদের দ্বারা অভিনয় করান প্রভৃতি নানা আয়োজনে ‘সখি-সমিতি’ বিখ্যাত হয়ে উঠল। ‘মায়ার খেলা’র প্রথম অভিনয় ‘সখি-সমিতি’তে হয়। সেবার দাদা ও সুরেন স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন। মায়াকুমারীদের মাথায় অলক্ষ্য তারে বিজলীর আলো জ্বালান তাঁদের একটি বিশেষ কারিগরি ছিল। আর সবাই অতি ভয়ে ভয়ে ছিল—পাছে বিজলীর তার জ্বলে উঠে মায়াকুমারীদের shock লাগে! কিন্তু তাঁরা নতুন বৈজ্ঞানিক, নির্ভীক! আশুবাবুর বিয়ের বাসরেও তাঁরা মসলন্দের তলায় বিজলীর তার পেতে তাঁকে চমক দিয়ে দিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন—জামাইবাবু স্থির হয়ে বসতেই পারছেন না—শ্যালীরা হেসে হেসে অস্থির। মেলাটি বেথুন স্কুলের চাতালে হয়। মেলা সুন্দর করে সাজান, স্টেজ বাঁধা, স্টল ঘেরা প্রভৃতি সব কাজেই দাদাদের ব্যাপৃত থাকতে হয়েছিল কদিন ধরে। তাতে তাঁর পড়ায় খুব অমনোযোগ হত।

 আমাদের সংস্কৃতের চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত বলতেন,—মা, পড়ার ক্ষতি করে ছেলেকে এই সব কাজে লাগিয়ে ছেলের মাথাটি খাচ্ছেন। সত্যি দাদা সেবার এণ্ট্রান্স ফেল করলেন। আমি পাস হয়ে গেলুম। আমরা সমান ক্লাসে পড়তুম, দাদা আমার চেয়ে এক ক্লাস নীচে হয়ে গেলেন। পরের বছর এণ্ট্রান্স দেবার সময় সময় দাদার হল বিষম জ্বর। দাদা আরও এক বছর পেছিয়ে গেলেন। আমি যে বছর দিলুম এফ-এ, তিনি সে বছর দিলেন এণ্ট্রান্স। যাহোক সব ক্ষতি পুষিয়ে গেল যখন সেই বছর তাঁকে

৫৯