পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু আমাকে ছাড়া দিলেন না—“ভারতী’র যুগ্ম-সম্পাদকের কাছি ফেলে আমাকে দূর থেকে বাঁধলেন ঘরের সঙ্গে।

 তাঁর হৃদয়ের কোরকে যে মাতৃস্নেহ আত্মোৎসর্গের জন্যে নিজের ছেলেমেয়ের অপেক্ষা করছিল, তার চরিতার্থতা হল অনেক বছর পরে। জগতের কাছে তাঁর শেষ মূর্তি তাঁর ‘মা’ মূর্তি। তাঁর ঘর আলো-করা বুকে ভরা দুটি ছেলে ও একটি মেয়েকে রেখে তিনি অনন্তশয়নে গেলেন।

দশ

উৎসব

 বাঙালী ঘরের বার মাসে তের পার্বণ আমাদের জীবনে ছিল না। যোড়াসাঁকোর ছেলেমেয়েদের উৎসবের মধ্যে ছিল এক ১১ই মাঘ। সেটা অন্যদের দুর্গাপূজার মত। অথচ দুর্গাপূজা উৎসবের অনেক অঙ্গ-বিচ্যুত আমাদের ১১ই মাঘ। প্রথমতঃ কুমোরের হাতে গড়া কালো মাটীর ঠাকুর ঢাকঢোল বাজিয়ে ঘরে এনে পূজোর দালানে স্থাপন করা, তারপর তাতে চোখের সামনে রং লাগান, চক্ষুদান—এসবের আমোদ ছেলেদের মোটেই হত না। এইতেই ত সাকার পূজায় ও নিরাকার ব্রহ্মোপাসনায় তফাৎ হয়ে গেল দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ট্রীটস্থ ৬নং বাড়িতে ও অন্যান্য ঠাকুর বাড়িতে—এমন কি পাশাপশি ছয়ের এক—৬।১—নম্বরের বাড়িতে। এটি ছিল আমাদের প্রমাতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময় বাড়ির সব পুরুষদের বৈঠকখানা বাড়ি। পরে ভাইদের সঙ্গে মাতামহ দেবেন্দ্রনাথের বিষয় বিভাগ হলে—এটি হয়ে গেল তাঁর ভ্রাতা ও ভ্রাতুষ্পুত্রদের বাড়ি। গগনেন্দ্র সমরেন্দ্র ও অবনীন্দ্রের পিতা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার মা ও মাতুলদের খুড়তুত ভাই ছিলেন। তাঁদের ৬।১নংয়ের বাড়িতে সবরকম পূজা আর্চা চলতে থাকল—শুধু ৬নংয়ে বন্ধ হয়ে গেল। তাঁরা অন্যান্য শাখার ঠাকুর গোষ্ঠী জ্ঞাতিদের স্রোতে গা ঢেলে দিলেন—৬নং সে স্রোত থেকে উঠে তীরে এসে দাঁড়াল একা। শুধু ধর্মগত বিশ্বাস ও পারিবারিক আচার-ব্যবহারে মহর্ষির বাড়ি আলাদা রইল তা নয়, সামাজিক মেলামেশা, পরস্পরের ক্রিয়াকর্মে যৌতুকাদি আদান-প্রদান, যাতায়াতাদিও বন্ধ হয়ে গেল। কেবল

৬৩