পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুণ মামার সঙ্গে বড়মামা মেজমামাদের সোদরোপম থাকায় এ

   সামাজিক সম্বন্ধ একেবারে বিচ্ছিন্ন হতে পারেনি—মেয়েদের হয়ে গিয়েছিল। পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানের প্রতিস্থাপক বাড়ির কর্তারা হলেও, তার ধারক, চালক ও পোষক মেয়েরাই হন—গীতায় তাই বলা হয়েছে—বাড়ির মেয়েরা বিগড়লে বা বিমুখ হলে কুলাচার টেঁকে না। ও-বাড়ির কোন পূজাপার্বণে এ-বাড়ির বৌঝিরা যাওয়া বন্ধ করলেন, মহর্ষির কুলাচার স্বতন্ত্র হল, মহর্ষির ভাইদের কুলাচার পূর্ববৎই রইল। কিন্তু হিন্দু সাকারবাদীর পক্ষে নিরাকারেও ভগবদুপাসনা লঘুষ্মন্য নয়। তাই এ-বাড়ির ১১ই মাঘের উপাসনায় যোগ দিতে ও গান শুনতে ও-বাড়ির সবাই আসতেন—মেয়েরাও। পাথুরিয়াঘাটা থেকে রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর প্রভৃতি বাড়ির কর্তারাই কিন্তু শুধু দুপুরবেলা একবারটি এসে মহর্ষির নিমন্ত্রণ রক্ষা করে চলে যেতেন, মেয়েরা নয়, মেয়েদের কাছে নিমন্ত্রণ পৌঁছতও না। বিজয়ার প্রণামও তাঁরা দিতে আসতেন। বাইরেই আসতেন, বাইরেই বসতেন, বাইরে থেকেই চলে যেতেন। তাঁদের আগমনবার্তা অন্দরে পৌঁছলেই বাড়ির মেয়ে বউয়েরা খড়খড়ি দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে তাঁদের দেখতে ধাবিত হতেন। ক্রমেই বেশি ছাড়াছাড়ি হতে লাগল। উত্তরপুরুষে মহর্ষির পরিবারের সঙ্গে অন্যান্য ঠাকুর পরিবারের ব্যবধান উত্তরোত্তর বাড়তে থাকল, আর মহর্ষির ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে কমতে থাকল। ৬।১নং পাথুরিয়াঘাটা কয়লাহাটার সঙ্গে বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হতে লাগল। ৬নং রইল উন্নতশিরে দাঁড়িয়ে একা, নিজের বিশ্বাসে অটল, বিচারে স্বাধীন, আচারে স্বতন্ত্র। এমন দিন এল ব্যবহারগত যেসব সংস্কারে মহর্ষির পুত্রকন্যারা অগ্রণী হয়েছিলেন সমস্ত ঠাকুরগোষ্ঠীর শাখা-প্রশাখায় তা অনুপ্রবিষ্ট হল—অন্তঃপুর-প্রথা উঠে গেল, স্ত্রীশিক্ষার প্রচার হল, সঙ্গীতানুশীলন মেয়েদের জীবনের অঙ্গ হল। ভেদ রয়ে গেল শুধু, পূজা ও উপাসনাপদ্ধতিতে—এক কথায় ব্রহ্মোৎসবে বা দোল-দুর্গোৎসবে।

 আমরা তাই আর কিছু জানিনে, দেখিনি—শুধু ব্রহ্মোৎসব দেখেছি। অতবড় কথাটা আমাদের মুখ দিয়ে বেরোত না—আমাদের মুখে ও মনে ছিল শুধু একটি কথা ‘‘১১ই মাঘ”। সাধারণ ব্রাহ্ম ও নববিধানীদের কারো ছিল ১০।১৫ দিনব্যাপী, কারো একমাসব্যাপী ব্রহ্মোৎসব, আমাদের ছিল শুধু একটি দিন ১১ই মাঘ। কিন্তু আমাদের শৈশবে সেদিনের

৬৪