পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আগমনীস্বরূপ আসত একমাস আগে থাকতে উঠানে লোহার থাম। অতি প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড ও অত্যন্ত ভারি ভারি থাম, তার একটু, ধাক্কা লাগলেই মাথা ফেটে যেতে পারে। সেগুলিকে দিনকতক ধরে খানিকটা তফাৎ তফাৎ করে উঠানধারে লাইন টেনে ফেলে রাখা হত। তারপর অনেক হাত নীচু পর্যন্ত গর্ত খুড়ে বনিয়াদ মজবুত করে সেগুলি পোঁতা হত। ১০ই মাঘে এক থাম থেকে আর এক থামে গাঁদাফুলের মালা লম্বা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হত, আর তার মাঝে মাঝে থামের গায়ে শামাদান ও দেওয়ালে বেলোয়ারের ঝাড় লাগান হত। উপরের দুদিককার বারান্দায়ওবঝাড় টাঙ্গিয়ে রাখা হত। মোমবাতি কিন্তু মাত্র একদিন আগে বসান হত, বেশী আগে বসালে পাছে চুরি হয়ে যায়।

 ৯ই মাঘের দিন বিকেলবেলায় তেতালার ছাদ থেকে উঠানের উপর শামিয়ানা খাটান হলে সমস্ত বার বাড়িটা অন্ধকারে ছেয়ে যেত। কিন্তু সেই অন্ধকারই আমাদের মনে উৎসবের ভাবকে ঘনিয়ে আনত। বিজলীর প্রচলনে যেবার প্রথম উঠানে থাম আনা ও পোঁতা বন্ধ হল আমাদের আনন্দের একটা বড় অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হল। বিজলীর দীপ-মালাতে চোখ অভ্যস্ত হতে ও মন তাকে মঞ্জুর করতে কয়েক বৎসর কাটল।

 এ-বাড়ির ১১ই মাঘের উৎসব এবং ও-বাড়ির পুজোয় একটা কিন্তু বড়রকম পার্থক্য ছিল ছেলেমেয়েদের পক্ষে-নতুন কাপড় পরা না পরায়। ১১ই মাঘে আমাদের নতুন কাপড় পরার কোন রেওয়াজ ছিল না, ভাল সাজগোজ করা হত এই পর্যন্ত। একমাস আগে থাকতে ঘরে ঘরে ‘পূজোর বাজার’ করে করে বাড়ির প্রত্যেক লোকটির হাতে নতুন কাপড় জামা উপহার দেওয়ার জনা সমগ্র বাঙালী জাতি যে নিযুক্ত থাকে, কলকাতার রাজপথে সেই সময় বড়মানুষদের ঘর থেকে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যে পূজোর তত্ত্ব বাহিত হয়—আমাদের বাড়িতে সে সবের কিছুই ছিল না। তাই প্রিপ্যারেটরি ক্লাসে উঠলে যখন একদিন আমাদের রচনার বিষয় দেওয়া হল, “A comparison between Xmas & Durgapuja”—আমার মাথায় বিশেষ কোন কথাই জুটল না। যে বিষয়ে জানি না কিছু, সে বিষয়ে লিখব কি? শিক্ষয়িত্রী আমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ইঙ্গিত দিলেন—"Xmasএ বাড়ির লোকের সঙ্গে মিলনের জন্যে ইংরেজরা যেমন উন্মুখ থাকেন পূজোর ছুটিতে বাঙালীরাও তেমনি। Xmasএ খ্রীস্টানেরা পরস্পরকে যেমন উপহার দেন—পূজোর সময় হিন্দুরাও তেমনি।” এই মোটা রকমের কতকগুলি সাদৃশ্যের ইঙ্গিত

৬৫