পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

“হেরি তব বিমল মুখভাতি
 দূর হল গহন দুখরাতি।”
 * * * *
“এস হে গৃহদেবতা এ ভবন।
 পুণ্য প্রভাবে কর পবিত্র!”
 * * * *
“তব প্রেম-আঁখি সতত জাগে
 জেনেও জানি না।”
 * * * *

হল— “এ কি অন্ধকার এ ভারতভূমি
বুঝি পিতা তারে ছেড়ে গেছ তুমি
প্রতি পদে পদে ডুবে রসাতলে
কে তারে উদ্ধার করিবে।”

আর কত তুলব? আদি ব্রাহ্মসমাজের ব্রহ্মসঙ্গীত পুস্তকের প্রথম ভাগ থেকে দশম একাদশ ভাগ পর্যন্ত যত দূর ছাপান হয়েছে সগুণ সাকার ঈশ্বর ভাবের সব রকম সঙ্গীত স্তরে স্তরে সঞ্চিত আছে। ভাবের ও ভাষার পার্থক্য দেখলে চিনতে পারা যাবে রামমোহন রায়ের সময়কার নিরাকার ব্রহ্ম কেমন করে ভাবের ঘরে একদম সাকার হয়ে নেমে ব্রহ্মবাদীর আকার- নিরাকার অভেদ জ্ঞানের ভিত্তিই পুনঃস্থাপিত করলেন। অথচ ভাবের ছবির চৌকাঠ পেরিয়ে গেলেই—মাটি-খড়ে, ধাতু-প্রস্তরে, বর্ণে-চিত্রে ভাবের উপলক্ষ্য ভগবানকে পূর্ণ লক্ষ্য করে মূর্ত করে আঁকড়ে ধরলেই রবীন্দ্র- নাথ উত্ত্যক্ত বিচলিত হয়ে উঠতেন। তাঁর আজন্ম ‘নিরাকার' পূজার সংস্কারে ঘা লাগত। আশু, চৌধুরী ও তাঁর ভাইদের সঙ্গে যোড়াসাঁকোর, বৈবাহিক সংযোগ স্থাপনের কিছু পরে তাঁর ভগ্নী ডাক্তার উমাদাস বাঁড়ুয্যের পত্নীর সঙ্গে আমরা অনেকে ছুটী যাপনে বেনারসে যাই। প্রমথ চৌধুরীর তখন ইন্দিরার সঙ্গে সদ্য বিবাহ হয়েছে। তাঁরাও ছিলেন। মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের প্রকাণ্ড বাড়ি হরধাম-এ আমরা সবাই ছিলুম। বৌবাজারের বসু মল্লিক পরিবারের হেম মল্লিকও সেবার সপরিবারে বেনারস গিয়েছিলেন। এক রাত্রি আমাদের বিশ্বেশ্বর মন্দিরের প্রসিদ্ধ আরতি দেখানোর জন্যে তিনি বন্দোবস্ত করলেন। আমরা সবাই মন্দিরের সামনে বস্লুম। পাণ্ডারা আমাদের চারিদিক ঘিরে রক্ষে করতে লাগল—যাতে ভিড় ভেঙ্গে আমাদের উপর না পড়ে। সে কি আরতি! আর

৬৯