পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভক্তের কি ভিড় ও জয়োল্লাস! বিশ্বেশ্বরের সে আরতি দেখে চিত্ত পুলকিত নমিত না হয়ে যায় না। এতদিন শুধু গুরু নানকের পদভাঙা রবীন্দ্রের ব্রহ্মসঙ্গীত বলে গাইতুম—

“তাঁর আরতি করে চন্দ্র তপন
দেব মানব বন্দে চরণ
আসীন সেই বিশ্ব শরণ
তাঁর জগৎ মন্দিরে।”

আজ সেই গানের ভাবেরই সত্যবৎ অনুভূতি লাভ হল। আরতি শেষে শত সহস্র বৎসর ধরে অগণ্য ভক্তের ভক্তিভাব-ভরিত সেই গগনতলে বিশ্বেশ্বরের মন্দির-দ্বারে আজকের সহস্র সহস্র ভক্তদের ভক্তি-তরঙ্গে ভক্তি মিলিয়ে আমরাও উদ্দেশে প্রণত হলুম।

 এই কথাটা কলকাতায় ফিরে গেলে রবিমামার কানে যখন পৌছল তিনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও রুষ্ট হয়ে বললেন—“তোরা এই রকম করে পৌত্তলিকতার প্রশ্রয় দিলি? মিথ্যাচার করলি?”

  হায়! ৬নং যোড়াসাঁকোর বাঁধা অবিশ্বাসের পথ থেকে সরে অনেক ছেলেমেয়ে বউই যে যুক্তির অবলম্বনেই পুরোন বিশ্বাসের valley-তে চলে এসেছেন সে বিষয়ে ক্রমেই যত পরিচয় পেতে থাকলেন ততই রবিমামা ক্ষুন্ন হতে থাকলেন।

 ছেলেবেলায় ১১ই মাঘের সঙ্গীতে আমরা যে অংশ গ্রহণ করতুম, সে বড়দের দ্বারা চালিত নিয়ত্রিত হয়ে যতটুকু করবার ততটুকু মাত্র; দিন পনের আগে থেকে গান-অভ্যাসের আসরে বসে গান শেখা ও সে রাত্রে গান গাওয়া এবং গানের সঙ্গে সঙ্গে বাজান। কিন্তু কয়েক বছর পরে নিয়ন্ত্রণের ভার কিছু কিছু, আমরাও নিলুম। আমাদের সঙ্গীতপ্রেম সেদিনটাকে কিছুটা নিজের নিজত্ব না দিয়ে পারলে না। আমরা চারজনে -সুরেন, বিবি, দাদা ও আমি প্রত্যেকে একটা না একটা কিছু যন্ত্র বাজা—কেউ কেউ দুটো তিনটেও বাজাতে পারতুম-হার্মোনিয়ম বাজানটা ত আমাদের গণ্যর মধ্যেই ছিল না। আমরা আপনা-আপনির মধ্যেই ইংরেজী গতের কনসার্ট প্রায়ই করতুম। ১১ই মাঘের সঙ্গীত প্রোগ্রামে প্রতি গানের আরম্ভে সেই গানের রাগ বা রাগিণীর খানিকটা আলাপ মিলিতযন্ত্রে খানিকক্ষণ ধরে করে তারপর গানটি ধরতে লাগলাম। আমাদের এই দলে প্রতিভা দিদির কোন কোন বোনও থাকতেন। সে সময়ে এবিষয়ে এত উৎসাহ ছিল আমাদের মনে পড়ে—একবার সকালের

৭০