পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপাসনায় যোড়াসাঁকোয় এসে, খেয়েদেয়ে আবার আমরা বিৰ্জিতলায়— তখন মেজমামীরা সেখানে থাকতেন—ফিরে গেলম, সেখানে সন্ধ্যের কনসার্টের জন্যে খানিকক্ষণ নিরিবিলি প্র্যাকটিস করে জিনিসটা সর্বাঙ্গ- শোভন করতে পারব বলে। আবার সন্ধ্যের পবেই যন্ত্রপাতি ঘাড়ে করে আমরা এসে স্ব স্ব স্থান গ্রহণ করলুম। গানের পূর্বে ইংরেজী ধাঁচের এই রকম খানিকটা উপক্রমণিকার দস্তুর এখন Radio এবং Gramo- phone Record গানে ঢুকেছে। সে সময় বাঙলা গানে এটা সম্পূর্ণ নতুন ছিল।

 একেই যোড়াসাঁকোর ছেলেমেয়েরা উৎসব-আনন্দে পরিক্ষীণ ছিল, ১১ই মাঘ ছাড়া কোন বড় উৎসব তাদের ছিল না—তার উপর লাহোর থেকে একবার ফিরে দেখি সেটিও তাদের প্রায় চলে গেছে। শান্তি- নিকেতনে রবিমামার আশ্রম জমে উঠবার পর থেকে তিনি বাড়ির ছেলে- মেয়েদের ত্যাজ্য করে তাঁর আশ্রমের ছেলেমেয়েদের প্রাধান্য দিতে লাগলেন। ১১ই মাঘের উৎসবের জন্যে গান ও বাজনার প্র্যাকটিসে বাড়ির ছেলে- মেয়েদের আর যোগ রইল না। বোলপুর আশ্রমের ছেলেমেয়েরাই একে- বারে সেখান থেকে তৈরি হয়ে এসে গাইতে বসে যায়। আগেকার সঙ্গীতের অংশবহনে প্রতিভা দিদির যে বোনেরাও যুক্ত ছিলেন তাঁদের কাছে অনুযোগ শুনলুম—আমরা এ বাড়ির মেয়েরা কোথায় যাই? আমাদের আর পালপার্বণ নেই, ঐ একটি ১১ই মাঘ। হিন্দু বাড়িতে দুর্গাপূজার উৎসবে বাড়ির সব ছেলেমেয়েদের কি আহ্লাদ। লোকজনের আনাগোনা, আদর-অভ্যর্থনা, খাওয়া-দাওয়া, নতুন কাপড় পরে ঘরে ঘরে বেড়ান—তাদের কত রকমে্র; আনন্দ। আমাদের ১১ই মাঘে পারিবারিক খাওয়া-দাওয়াও কবে থেকে উঠে গেছে, বাকী ছিল ঐ গানবাজনায় যোগটুকু। রবিকাকা তা থেকেও আমাদের বঞ্চিত করে দিলেন। সারা বছরের এই একটিমাত্র পারিবারিক উৎসব আমাদের-তাও রইল না। আমরা কি সাধারণ সমাজের দলে ঢুকব এখন, না নববিধানের? আমরা যদি হিন্দু সমাজের বক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তাতেও গঞ্জনা দেন। আমাদের ভাগ্যে তাঁর ঠাট্টা বিদ্রুপ অবজ্ঞা ঔদাসীন্য—পরের বাড়ির মেয়েদের ভাগ্যে ১১ই মাঘের উৎসব।

 এ বড় ভীষণ মর্মব্যথার অনুযোগ। বাস্তবিকই কর্তা দাদামশায় থাকতে থাকতেই ব্যয়সঙ্কোচের উদ্দেশ্যে ১১ই মাঘের উৎসবের কায়া মলিন ও ক্ষীণ হতে আরম্ভ হয়েছিল। তাঁর দেহাবসানের পর থেকে ওটি

৭১