পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
॥ এগার॥
সংগীত

আজকাল বাঙলাদেশে মেয়েদের সঙ্গীত-বিদ্যা-বিশারদতায় কেউ কি কল্পনা করতে পারেন এমন দিন ছিল যখন এই বাঙলায় ভদ্রপরিবারের মেয়েদের মধ্যে সঙ্গীত-চর্চা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল—যখন নিজের বাড়ির মেয়েদের কণ্ঠেও প্রকাশ্যে গান শোনা নিতান্ত দুর্লভ ছিল? তাইত ১১ই মাঘে ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের গানের আকর্ষণে কলকাতা ভেঙ্গে পড়ত। কিন্তু সে গান ধ্রুপদী চালের গাম্ভীর্য রক্ষা করা গান—সে পেশাদারী গায়িকাদের টপা ঠংরি খেয়ালের মূর্ছনায় মূর্ছনায় চিত্তবিঘূর্ণক গান নয়। রবিমামার সঙ্গে একবার আর একজনদের বাড়ি ব্রহ্মোৎসব সভায় গান গাইতে যাওয়া আমার মনে পড়ে-সে কাশিয়াবাগানের কাছাকাছিই কাশীশ্বর মিত্রের বাড়িতে। সেকালে খালি যোড়াসাঁকোয় ১১ই মাঘ হত বটে কিন্তু আদিসমাজী দুই-একজন ভক্ত ব্রাহ্মের বাড়ি নিয়মিত ব্রহ্মোৎসব হত। তাঁরা আদি ব্রাহ্মসমাজের ব্রাহ্ম—তার অর্থ তাঁরা সাধারণ ব্রাহ্মদের মত আনুষ্ঠানিক ব্রাহ্ম নন -আদি ব্রাহ্মসমাজের বেদীতে যেসব আচার্যরা বসেন তাঁরাও নন—তাঁরা সমাজের উপাসনা-গৃহে বা উৎসবের সভায় অমূর্ত ব্রহ্মের আরাধক বটে; কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের পূর্ববৎ পৌত্তলিক বিধানের অনুবর্তক। থিওরিতে ও প্র্যাকটিসে তাঁরা এক নন। এইরকম একটি ব্রাহ্ম ছিলেন নবাগানের কাশীশ্বর মিত্র। আমাদের কাশিয়াবাগান বাড়ির ফটকের বাইরেই একটা মস্ত লম্বা পুকুর ছিল। তার আশপাশে গহস্থদের বাস। এ পুকুরে তাদের স্নান করা বাসনমাজাদি কাজ চলত, কিন্তু এর জল মিঠে নয় বলে খাওয়া চলত না। সেই জন্যে আমাদের বাড়ির পুকুর থেকে পাড়ার মেয়েরা খাবার ও রাঁধবার জল নিয়ে যেত। আমাদের পুকুরের নাম ছিল পাড়ায় “মিছরি পুকুর”। কাশীশ্বর মিত্রের বাড়ির ঘাট ঐ পুকুরের উপর। তাঁর বড় ছেলে শ্রীনাথ মিত্রের স্ত্রীর সঙ্গে আমার মায়ের 'বকুলফুল’ পাতান হয়েছিল। সে বছর তাদের বাড়ির ব্রহ্মোৎসবে রবিমামার ও আমার দুজনেরই গান হল। রবিমামার গলা তখন কি সুমিষ্ট আর তাঁর গান গাওয়া কি ভাব দিয়েই-১১ই মাঘের অক্ষয়বাবুদের দলের গানের সঙ্গে কি তফাৎ। রবিমামা ত একদিন গেয়েই চলে গেলেন, আমার ডাক

৭৩