পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়তে লাগল হপ্তায় হপ্তায় তাঁদের রবিবারের অধিবেশনে। তাছাড়া মধ্যে মধ্যে তাঁদের বাড়ির ভিতরে পারিবারিক আসরেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গানের পর গান গেয়ে যাই নানা রকমের—শ্রান্ত হইনে। সেকালে যোড়া- সাঁকোয় পাতানর রেওয়াজটা খুব ছিল—আমার মায়ের অনেকগুলি পাতান সখী ছিলেন। কাশিয়াবাগানে এসে বকুলফুলের পর হলেন “মিষ্টি হাসি” ইনি বৌবাজারের এটর্নী শ্রীনাথ দাসের পুত্র ‘সময়'- সম্পাদক জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের পত্নী। এদের বাড়িতে আমার জন্যে গানের আড্ডা জমতে লাগল। অবিরাম non-stop গান-চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে। গলা ব্যথাও হত না, শরীর ক্লান্তও হত না। তখন ১০।১১ বছর বয়স আমার। এর পর ব্যারিস্টার ডবলিউ সি ব্যানার্জির পত্নীর বাড়ি মধ্যে মধ্যে সখি-সমিতির অধিবেশন হতে লাগল—তাঁর ননদরা অনেকেই থিয়সফিস্ট ছিলেন। সেখানেও আমার উপর গানের ফরমাসের শেষ নেই। সেকালে মেয়েদের মধ্যে গাইয়ের অপ্রাচুর্যতাবশতঃই আমার এত ডাক ছিল। মনে পড়ে মনোমোহন ঘোষ ব্যারিস্টারের ওখানে বঙ্গ নাটকে ও অন্যান্য বড় সাহেব-মেমকে ডিনার ও ঈভনিং পার্টি দেওয়া উপলক্ষে মিসেস ঘোষ ৪নং থিয়েটার রোড থেকে ছুটে ছুটে কাশিয়াবাগানে আসতেন মা-বাবা ও আমাকে নিমন্ত্রণ করতে। ইংরেজী কায়দা অনুসারে তখনো আমার ডিনার পার্টিতে যাবার বয়স হয়নি—১৪ বছরেরও কম বয়সী আমি। যোলর আগে কেউ বাইরে ডিনারে বসার উপযুক্ত গণ্য হয়। কিন্তু necessity has no law দিশী গান শোনাতেই হবে— সাহেব-মেমদের দেখাতে হবে আমাদের দেশের মেয়েরাও সঙ্গীতবিদ্যায়’ নিপুণ। তাই ইংরেজী গান ও বাজনার জন্যে প্রতিভাদিদি ও দিশীর জন্যে আমার প্রয়োজন ছিল। প্রতিদিদি খুব ভাল পিয়ানো বাজাতেন আর চমৎকার ইংরেজী গান গাইতেন। এমন কি প্রথম প্রথম তাঁর ইংরেজীয়ানা গলায় দিশী গান মানাত না, পরে ইংরেজী ছেড়ে হিন্দী গানেরই চর্চা আরম্ভ করলে তাতেই সুপটু হয়ে উঠলেন।

 এর চেয়েও নিকটস্থ দিনের একটি ঘটনা মনে পড়ে। আমি লাহোর থেকে সেবার কিছু দিনের জন্যে কলকাতায় এসেছি। স্যার রাজেন মুখুয্যের বাড়ি হারকোর্ট বাটলারের বর্মায় গবর্নর হয়ে যাওয়ার উপলক্ষে বিদায় ডিনার পার্টিতে আমার নিমন্ত্রণ হয়েছে। প্রায় একশ লোকের ডিনার। স্যার ও লেডি আর এনের বিশেষ ইচ্ছা সে রাত্রে আমি গান গাই। সে রাতে হঠাৎ যাবার মূহুর্তে মায়ের মোটর গাড়ি বিগড়ে গেল—

৭৪