পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার অপাঠ্য। সেই পর্যন্ত আমার সখ গেল উর্দু পড়তে ও লিখতে শিখতে। বাড়ি ফিরে এসে কাশিয়াবাগানে উর্দু ওস্তাদ কোথা পাই? একজন মুসলমান ডাকপিয়নকে ধরে, তাকে মাসে দুটাকা বক্সিস দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তার কাছে উর্দু অক্ষর পরিচয় আরম্ভ করলাম। উর্দু প্রথম ভাগ সেই-ই শেষ করালে। উর্দু শিশুপাঠ্য পুস্তক দেখলুম বাঙলার মত নীরস নয়, হাস্যরসে রসাল। সে বইগুলির যদি এখনও চল থাকে, কেউ আনিয়ে দেখতে পারেন। একটা পাঠের মর্ম আমার মনে পড়ে—একজন রুগী হাকিমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞস করলে, “হাকিম সাহেব! খাওয়ার প্রশস্ত সময়টা কি বাৎলে দিন।”

 হাকিম বললেন—“গরীবের যে সময় খাওয়া জুটবে, আর ধনীর যে সময় ক্ষিদে লাগবে।”

 আর একটি—একজন কৃপণ রাধাবাঈয়ের নাচ দেবে ভেবেছে। তাতে কি কি আয়োজন করতে হবে খোঁজ করে শুনলে—তিন মণ তেলের যোগাড় সব প্রথমে দরকার। সারারাত ধরে নাচ চলবে, তাতে আলো জ্বালিয়ে রাখতে হলে তিন মণ তেলের কম হবে না। শুনেই সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে বললে—“তিন মণ তেলও পড়বে না, রাধাও নাচবে না।” এইসব পাঠগুলি আমার ডাকপেয়াদা ওস্তাদটির সামনে পড়তে বাধ বাধ ঠেকত। চাকর শ্রেণীয়র কাছে ত হেসে গড়াগড়ি যেতে পারিনে, তার সামনে গুরুগম্ভীর হয়ে বানান করে করে পড়ে সে চলে গেলে হেসে বাঁচতুম।

 দাদামশায় সেকালের শিক্ষাবিধি অনুসারে ফার্সিতে অধীত-বিদ্য ছিলেন। সব কবিদের মধ্যে হাফেজ তাঁর প্রিয়তম ছিলেন। হাফেজের একখানি কাব্য-সংগ্রহ সর্বদা তাঁর হাতের কাছেই থাকত। তার থেকে আবৃত্তি করে করে নিজের এক একটা psychological phase ব্যক্ত করতেন।

 যেবার আমি ভারতীতে ‘আহিতাগ্নিকা’ কবিতা ও ঋগ্বেদের মন্ত্র অবলম্বনে ‘শুনঃশেফের বিলাপ’ লিখি দাদামশায়কে ওদুটি পড়ে শোনান হয়। তিনি শুনে খুব প্রীত হন এবং আমায় বলেন—“আমি তোমায় হাফেজের এই কটি লাইন দিচ্ছি, এতে সুর বসিয়ে আমায় গেয়ে শোনাতে পারবে?” আমি বিনম্রভাবে স্বীকৃত হলুম। এক সপ্তাহ পরে তাঁর কাছে খবর গেল—“সুর দেওয়া হয়েছে, যেদিন বলবেন শোনাতে যাব।”

৭৯