পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গেছে। তিনি নিজের বাড়িতে থাকেন। খুসীদের মায়ের মৃত্যু অনেকদিন আগে হয়েছে। তখন খুসীর দুই কনিষ্ঠ ভাই সতীশ ও জ্যোতিষ—পরে এস আর দাস ও জে আর দাস বলে সুবিদিত,—খুব ছোট ছোট ছিলেন। শুনতে পেতুম তাদের পিতা দুর্গামোহন দাস মাতৃহীন বালকদের এত সযত্নে ও সস্নেহে পালন করতেন, অনেক সময় মা বেঁচে থাকলেও শিশুরা অত আদরযত্ন পায় না। একবার জ্যোতিষের অসুখের সময় ডাক্তাররা মাসাবধি তার সন্দেশ রসগোল্লা খাওয়া নিষেধ করে দেন। সেই সময় দুর্গামোহনবাবু নিজেও তা খাওয়া বন্ধ করলেন—পাছে তাঁকে খেতে দেখলে ছেলের লোভ হয়। প্রতি পদে পদে সন্তানদের সঙ্গে তাঁর সহানভূতির যোগ। তাই জন্যে সন্তানদের পিতৃভক্তিও তাঁর স্মৃতিতর্পণে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল। এমন কি বৃদ্ধ পিতার সঙ্গিহীন দোসরহীন জীবনের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হয়ে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা তাঁর সেবা, শুশ্রূষা ও একটি জীবনসঙ্গিনী লাভের প্রতি দৃষ্টি রেখে অতুলপ্রসাদ সেনের বিধবা মাতার সঙ্গে তাঁর বিবাহ সংঘটন করেন। অতুলপ্রসাদ ও তাঁর তিনটি বোনের পালনপোষণের ভার তিনিই গ্রহণ করলেন, ঠিক যেন নিজের ছেলে ও মেয়েদের মতই তারাও হল।

 আমাকে খুসী যখন তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে লাগল, দেখলুম এদের বাড়ির চালচলনে অনেকটা সাহেবিয়ানা ঢুকেছে—বিশেষতঃ মিসেস পি কে রায়ের। তাঁর তিনটি মেয়ে লরেটো কন্‌ভেণ্টে পড়তে যায়। আমাদের বাড়ির থেকেও প্রতিভাদিদি, তাঁর দুই-একটি বোন ও বিবি—এঁরা লরেটোতে পড়তেন। কিন্তু বাড়ির হাওয়ায় ইংরেজীয়ানা মাথা তুলতে পারত না। এখানে বাঙালী মেয়েদের বাড়িতেও পরস্পরের সঙ্গে সদাসর্বদা ইংরেজীতে কথোপকথন সর্বপ্রথম শুনতে পেলুম। তার বেশ একটা চটক ছিল, বাঙালী ছোট মেয়েগুলির মুখে ফুট ফুট করে ইংরেজী ভাষণ বেশ মিষ্টি লাগত। কিন্তু সে মিষ্টতা আপাতমধুর—দেশপ্রিয়তার উজানে টেনে নিয়ে যাওয়া মিষ্টতা। বড় হয়ে যখন কালের হাওয়ার ধাক্কা খেয়ে আবার দেশের দিকেই চলতে ইচ্ছা হবে, তখন অনেক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অগ্রসর হতে হবে। ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজের যে সব মেয়েরা শুধু ইংরেজীতেই শিক্ষা পেয়েছেন—গোড়ার দিকে বাংলা লেখাপড়া মোটেই শেখেন নি—পরজীবনে আহরিত বাঙলার উচ্চারণে তাঁদের একটা আড় থেকে যায়—না সেটা মেমেদের স্পষ্ট বিকৃত উচ্চারণ—না বাঙালীর স্বাভাবিক বাঙলা উচ্চারণ।

৮৩