পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
জীবন-স্মৃতি

দিন আমার দুই চোখের বিরাম ছিল না—পাছে কিছু একটা এড়াইয়া যায় এই আমার ভয়। যেখানে পাহাড়ের কোনাে কোণে পথের কোনাে বাঁকে পল্লবভারাচ্ছন্ন বনস্পতির দল নিবিড় ছায়া রচনা করিয়া দাড়াইয়া আছে, এবং ধ্যানরত বৃদ্ধ তপস্বীদের কোলের কাছে লীলাময়ী মুনিকন্যাদের মতাে দুই একটি ঝরনার ধারা সেই ছায়াতল দিয়া শৈবালাচ্ছন্ন কালাে পাথরগুলার গা বাহিয়া ঘনশীতল অন্ধকারের নিভৃত নেপথ্য হইতে কুলকুল করিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে, সেখানে ঝাপানিরা ঋপান নামাইয়া বিশ্রাম করিত! আমি লুব্ধভাবে মনে করিতাম এ-সমস্ত জায়গা আমাদিগকে ছাড়িয়া যাইতে হইতেছে কেন? এইখানে থাকিলেই তো হয়।

 নূতন পরিচয়ের ওই একটা মস্ত সুবিধা। মন তখনাে জানিতে পারে না যে এমন আর অনেক আছে। তাহা জানিতে পারলেই হিসাবি মন মনােযােগের খরচটা স্বচাইতে চেষ্টা করে। যখন প্রত্যেক জিনিসটাকেই একান্ত দুর্লভ বলিয়া মনে করে তখনই মন আপনার কৃপণতা ঘুচাইয়া পূর্ণ মূল্য দেয়। তাই আমি এক-একদিন কলিকাতার রাস্তা দিয়া যাইতে যাইতে নিজেকে বিদেশী বলিয়া কল্পনা করি। তখনই বুঝিতে পারি দেখিবার জিনিস ঢের আছে, কেবল মন দিবার মূল্য দিই না বলিয়া দেখিতে পাই না। এই কারণেই দেখিবার ক্ষুধা মিটাইবার জন্য লােকে বিদেশে যায়।

 আমার কাছে পিতা তাঁহার ছােটো ক্যাশবাক্সটি রাখিবার ভার দিয়াছিলেন। এ সম্বন্ধে আমিই যােগাতম ব্যক্তি সে-