পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
জীবন-স্মৃতি

হৃদ্যতার সঙ্গে তিনি আমাকে আহ্বান করিয়া লইতেন যে, মানে লেশমাত্র সংকোচ থাকিত না। তাহার পরে ভাবে ভোর হইয়া কবিতা শুনাইতেন, গানও গাহিতেন। গলায় যে তাঁহার খুব বেশি সুর ছিল তাহা নহে, একেবারে বেসুরাও তিনি ছিলেন না—যে সুরটা গাহিতেছেন তাহার একটা আন্দাজ পাওয়া যাইত। গম্ভীর গদ্‌গদ কণ্ঠে চোখ বুজিয়া গান গাহিতেন, সুরে যাহা পৌঁছিত না, ভাবে তাহা ভরিয়া তুলিতেন। তাঁহার কণ্ঠের সেই গানগুলি এখনো মনে পড়ে—“বালা খেলা করে চাঁদের কিরণে,” “কে রে বালা কিরণময়ী ব্রহ্মরন্ধ্রে বিহরে।” তাঁহার গানে সুর বসাইয়া আমিও তাঁহাকে কখনো কখনো শুনাইতে যাইতাম।

 কালিদাস ও বাল্মীকির কবিত্বে তিনি মুগ্ধ ছিলেন।

 মনে আছে একদিন তিনি আমার কাছে কুমারসম্ভাবের প্রথম শ্লোকটি খুব গলা ছাড়িয়া আবৃত্তি করিয়া বলিয়াছিলেন, ইহাতে পরে পরে যে এতগুলি দীর্ঘ অ স্বরের প্রয়োগ হইয়াছে তাহা আকস্মিক নহে—হিমালয়ের উদার মহিমাকে এই আ স্বরের দ্বারা বিস্ফারিত করিয়া দেখাইবার জন্যই “দেবতাত্মা” হইতে আরম্ভ করিয়া “নগাধিরাজ” পর্যন্ত কবি এতগুলি আকারের সমাবেশ করিয়াছেন।

 বিহারীবাবুর মতো কাব্য লিখিব, আমার মনের আকাঙক্ষাটা তখন ওই পর্যন্ত দৌড়িত। হয়তো কোনোদিন বা মনে করিয়া বসিতে পারিতাম যে, তাঁহার মতোই