পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রচনাপ্রকাশ
১৪৩

 তখনকার কালের আমার একটি বন্ধু আছেন—তাঁহার বয়স আমার চেয়ে বড়ো। তিনি আমাকে মাঝে মাঝে “ভুবনমোহিনী” সই-করা চিঠি আনিয়া দেখাইতেন। “ভুবনমোহিনী” কবিতায় ইনি মুগ্ধ হইয়া পড়িয়াছিলেন এবং “ভুবনমোহিনী” ঠিকানায় প্রায় তিনি কাপড়টা, বইটা ভক্তিউপহাররূপে পাঠাইয়া দিতেন।

 এই কবিতাগুলির স্থানে স্থানে ভাবে ও ভাষায় এমন অসংযম ছিল যে, এগুলিকে স্ত্রীলোকের লেখা বলিয়া মনে করিতে আমার ভালো লাগিত না। চিঠিগুলি দেখিয়াও পত্রলেখককে স্ত্রীজাতীয় বলিয়া মনে করা অসম্ভব হইল। কিন্তু আমার সংশয়ে বন্ধুর নিষ্ঠা টলিল না, তাহার প্রতিমা পূজা চলিতে লাগিল।

 আমি তখন “ভুবনমোহিনীপ্রতিভা” “দুঃখসঙ্গিনী” ও “অবসরসরোজিনী” বই তিনখানি অবলম্বন করিয়া জ্ঞানাঙ্কুরে এক সমালোচনা লিখিলাম।

 খুব ঘটা করিয়া লিখিয়াছিলাম। খণ্ডকাব্যেরই বা লক্ষণ কী, গীতিকাব্যেরই বা লক্ষণ কী, তাহা অপূর্ব বিচক্ষণতার সহিত আলোচনা করিয়াছিলাম। সুবিধার কথা এই ছিল ছাপার অক্ষর সবগুলিই সমান নির্বিকার, তাহার মুখ দেখিয়া কিছুমাত্র চিনিবার জো নাই, লেখকটি কেমন, তাহার বিদ্যাবুদ্ধির দৌড় কত। আমার বন্ধু অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া আসিয়া কহিলেন একজন বি, এ, তোমার এই লেখার জবাব লিখিতেছেন! বি, এ শুনিয়া আমার আর বাক্যস্ফূর্তি হইল