পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
জীবন-স্মৃতি

জায়গায় একবার গাড়ি থামিল। জানলা হইতে মুখ বাড়াইয়া দেখিলাম সমস্ত অন্ধকার। লােকজন নাই, আলো নাই, প্লাটফর্ম নাই, কিছুই নাই। ভিতরে যাহারা থাকে তাহারাই প্রকৃত তত্ত্বজানা হইতে বঞ্চিত—রেলগাড়ি কেন যে অস্থানে অসময়ে থামিয়া বসিয়া থাকে রেলের আরােহীদের তাহা বুঝিবার উপায় নাই অতএব পুনরায় পড়ায় মন দিলাম। কিছুক্ষণ বাদে গাড়ি পিছু হটিতে লাগিল—মনে ঠিক করিলাম রেলগাড়ির চরিত্র বুঝিবার চেষ্টা করা মিথ্যা। কিন্তু যখন দেখিলাম যে-স্টেশনটি ছাড়িয়া গিয়াছিলাম সেই স্টেশনে আসিয়া গাড়ি থামিল তখন উদাসীন থাকা আমার পক্ষে কঠিন হইল। স্টেশনের লােককে জিজ্ঞাসা করিলাম অমুক স্টেশন কখন পাওয়া যাইবে? সে কহিল সেইখান হইতেই তাে এ-গাড়ি এইমাত্র আসিয়াছে। ব্যাকুল হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম কোথায় যাইতেছে? সে কহিল লণ্ডনে। বুঝিলাম এ গাড়ি খেয়াগাড়ি, পারাপার করে। ব্যতিব্যস্ত হইয়া হঠাৎ, সেইখানে নামিয়া পড়িলাম। জিজ্ঞাসা করিলাম, উত্তরের গাড়ি কখন পাওয়া যাইবে? সে কহিল, আজ রাত্রে নয়। জিজ্ঞাসা করিলাম কাছাকাছির মধ্যে সরাই কোথাও আছে? সে বলিল, পাঁচ মাইলের মধ্যে না।

 প্রাতে দশটার সময় আহার করিয়া বাহির হইয়াছি ইতিমধ্যে জলস্পর্শ করি নাই। কিন্তু বৈরাগ্য ছাড়া যখন দ্বিতীয় কোনাে পথ খোলা না থাকে তখন নিবৃত্তিই সব চেয়ে সােজা। মােটা ওভারকোটের বােতাম গলা পর্যন্ত আঁটিয়া