পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভগ্নহৃদয়
১৯৩

 অথচ য়ুরােপের সঙ্গে আমাদের অবস্থার খুব একটা প্রভেদ ছিল। য়ুরােপীয় চিত্তের এই চাঞ্চল্য, এই নিময়বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সেখানকার ইতিহাস হইতেই সাহিত্যে প্রতিফলিত হইয়াছিল। তাহার অন্তরে বাহিরে একটা মিল ছিল। সেখানে সত্যই ঝড় উঠিয়াছিল বলিয়াই ঝড়ের গর্জন শুনা গিয়াছিল। আমাদের সমাজে যে অল্প একটু হাওয়া দিয়াছিল তাহার সত্যসুরটি মর্মরধ্বনির উপরে চড়িতে চায় না—কিন্তু সেটুকুতে তাে আমাদের মন তৃপ্তি মানিতেছিল না, এইজন্যই আমরা ঝড়ের ঢাকের নকল করিতে গিয়া নিজের প্রতি জবরদস্তি করিয়া অতিশয়ােক্তির দিকে যাইতেছিলাম। এখনো সেই ঝোঁকটা কাটিয়াছে বলিয়া মনে হয় না। সহজে কাটিবে না। তাহার প্রধান কারণ, ইংরেজিসাহিত্যে সাহিত্যকলার সংযম এখনাে আসে নাই; এখনো সেখানে বেশি করিয়া বলা ও তীব্র করিয়া প্রকাশ করার প্রাদুর্ভাব সর্বত্রই। হৃদয়াবেগ সাহিত্যের একটা উপকরণমাত্র, তাহা যে লক্ষ্য নহে, সাহিত্যের লক্ষ্যই পরিপূর্ণতার সৌন্দর্য, সুতরাং সংযম ও সরলতা, এ-কথাটা এখনাে ইংরেজিসাহিত্যে সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃত হয় নাই।

 আমাদের মন শিশুকাল হইতে মৃত্যুকাল পর্যন্ত কেবলমাত্র এই ইংরেজিসাহিত্যেই গড়িয়া উঠিতেছে। য়ুরােপের যে-সকল প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে সাহিত্যকলার মর্যাদা সংযমের সাধনায় পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে সে-সাহিত্যগুলি আমাদের শিক্ষার অঙ্গ নহে, এইজন্যই সাহিত্যরচনার রীতি