পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রভাত-সংগীত
২৩৭

প্রথম বহিমুর্থ উচ্ছ্বাস, সেই জন্যে ওটাতে আর কিছুমাত্র বাছবিচার নেই।”—

 প্রথম উচ্ছ্বাসের একটা সাধারণ ভাবের ব্যাপ্ত আনন্দ ক্রমে আমাদিগকে বিশেষ পরিচয়ের দিকে ঠেলিয়া লইয়া যায়—বিলের জল ক্রমে যেন নদী হইয়া বাহির হইতে চায়— তখন পূর্বরাগ অনুরাগে পরিণত হয়। বস্তুত অনুরাগ পূর্বরাগের অপেক্ষা এক হিসাবে সংকীর্ণ। তাহা এক গ্রাসে সমস্তটা না লইয়া ক্রমে ক্রমে খণ্ডে খণ্ডে চাখিয়া লইতে থাকে। প্রেম তখন একাগ্র হইয়া অংশের মধ্যেই সমগ্রকে, সীমার মধ্যেই অসীমকে উপভোগ করিতে পারে। তখন তাহার চিত্ত প্রত্যক্ষ বিশেষের মধ্য দিয়াই অপ্রত্যক্ষ অশেষের মধ্যে আপনাকে প্রসারিত করিয়া দেয়। তখন সে যাহা পায় তাহা কেবল নিজের মনের একটা অনিদিষ্ট ভাবানন্দ নহে-বাহিরের সহিত প্রত্যক্ষের সহিত একান্ত মিলিত হইয়া তাহার হৃদয়ের ভাবটি সর্বাঙ্গীণ সত্য হইয়া উঠে। মোহিতবাবুর গ্রন্থাবলীতে প্রভাত-সংগীতের কবিতাগুলিকে “নিষ্ক্রমণ” নাম দেওয়া হইয়াছে। কারণ, তাহা হৃদয়ারণ্য হইতে বাহিরের বিশ্বে প্রথম আগমনের বার্তা। তার পরে সুখদুঃখ-আলোকঅন্ধকারে সংসারপথের যাত্রী এই হৃদয়টার সঙ্গে একে-একে খণ্ডে-খণ্ডে নানা সুরে ও নানা ছন্দে বিচিত্রভাবে বিশ্বের মিলন ঘটিয়াছে—অবশেষে এই বহুবিচিত্রের। নানা বাঁধানো ঘাটের ভিতর দিয়া পরিচয়ের ধারা বাহিয়া চলিতে চলিতে নিশ্চয়ই আর-একদিন আবার একবার অসীম