পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
জীবন-স্মৃতি

ইস্কুলঘরের কোণে যে পাহাড় সৃষ্টির উপযুক্ত ভিত্তি নহে,এমন অকস্মাৎ এমন রূঢ় ভাবে সে শিক্ষালাভ করিয়া বড়ােই দুঃখ বােধ করিয়াছিলাম। আমাদের লীলার সঙ্গে বড়ােদের ইচ্ছার যে এত প্রভেদ তাহা স্মরণ করিয়া, গৃহভিত্তির অপ-সারিত প্রস্তর ভার আমাদের মনের মধ্যে আসিয়া চাপিয়া বসিল।

 তখনকার দিনে এই পৃথিবী বস্তুটার রস কী নিবিড় ছিল সেই কথাই মনে পড়ে। কী মাটি, কী জল, কী গাছপালা, কী আকাশ সমস্তই তখন কথা কহিত—মনকে কোনোমতেই উদাসীন থাকিতে দেয় নাই। পৃথিবীকে কেবলমাত্র উপরের তলাতেই দেখিতেছি, তাহার ভিতরের তলাটা দেখিতে পাইতেছি না, ইহাতে কতদিন যে মনকে ধাক্কা দিয়াছে তাহা বলিতে পারি না। কী করিলে পৃথিবীর উপরকার এই মেটে রঙের মলাটটাকে খুলিয়া ফেলা যাইতে পারে তাহার কতই প্ল্যান ঠাওরাইয়াছি। মনে ভাবিতাম, একটার পর আর-একটা বাঁশ যদি ঠুকিয়া ঠুকিয়া পোঁতা যায়। এমনি করিয়া অনেক বাঁশ পোঁতা হইয়া গেলে পৃথিবীর খুব গভীরতম তলাটাকে হয়তো একরকম করিয়া নাগাল পাওয়া যাইতে পারে। মাঘােৎসব উপলক্ষ্যে আমাদের উঠানের চারিধারে সারি সারি করিয়া কাঠের থাম পুঁতিয়া তাহাতে ঝড় টাঙানাে হইত। পয়লা মাঘ হইতেই এজন্য উঠানে মাটিকাটা আরম্ভ হইত। সর্বত্রই উৎসবের উদ্যোগের আরম্ভটা ছেলেদের কাছে অত্যন্ত ঔৎসুক্যজনক। কিন্তু