পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘর ও বাহির
২৫

আমার কাছে বিশেষভাবে এই মাটিকাটা ব্যাপারের একটা টান ছিল। যদিচ প্রত্যেক বৎসরই মাটি কাটিতে দেখিয়াছি-দেখিয়াছি গত বড় হইতে হইতে একটু একটু করিয়া সমস্ত মানুষটাই গহ্বরের নিচে তলাইয়া গিয়াছে অথচ তাহার মধ্যে কোনােবারই এমন কিছু দেখা দেয় নাই যাহা কোনো রাজপুত্র বা পাত্রের পুত্রের পাতালপুরযাত্রা সফল করিতে পারে, তবুও প্রত্যেক বারেই আমার মনে হইত একটা রহস্য- সিন্ধুকের ডালা খােলা হইতেছে। মনে হইত যেন আর একটু খুঁড়িলেই হয়—কিন্তু বৎসরের পর বৎসর গেল সেই আরেকটুকু কোনােবারেই খোড়া হইল না। পর্দায় একটুখানি টান দেওয়াই হইল কিন্তু তােলা হইল না। মনে হইত বড়ােরা তাে ইচ্ছা করিলেই সব করাইতে পারেন তবে তাহারা কেন এমন অগভীরের মধ্যে থামিয়া বসিয়া আছেন—আমাদের মতো শিশুর আজ্ঞা যদি খাটিত তাহা হইলে পৃথিবীর গূঢ়তম সংবাদটি এমন উদাসীনভাবে মাটিচাপা পড়িয়া থাকিত না। আর যেখানে আকাশের নীলিমা তাহারই পশ্চাতে আকাশের সমস্ত রহস্য, সে চিন্তাও মনকে ঠেলা দিত। যেদিন বোধোদয় পড়াইবার উপলক্ষ্যে পণ্ডিত-মহাশয় বলিলেন, আকাশের ঐ নীল গােলকটি কোনাে একটা বাধামাত্রই নহে তখন সেটা কী অসম্ভব আশ্চর্যই মনে হইয়াছিল। তিনি বলিলেন, সিঁড়ির উপর সিঁড়ি লাগাইয়া উপরে উঠিয়া যাও না, কোথাও মাথা ঠেকিবে না। আমি ভাবিলাম সিঁড়ি সম্বন্ধে বুঝি তিনি অনাবশ্যক কার্পণ্য