পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
জীবন-স্মৃতি

করিয়া তরঙ্গে তরঙ্গে উঠিয়া পড়িয়া সাগরযাত্রায় চলিয়াছে তাহারই জলোচ্ছ্বাসের শব্দ কি আমার ওই গলির ওপারটার প্রতিবেশীসমাজ হইতেই আমার কানে আসিয়া পৌঁছিতেছিল? তাহা নহে। যেখানে জীবনের উৎসব হইতেছে সেইখানকার প্রবল সুখদুঃখের নিমন্ত্রণ পাইবার জন্য একলা ঘরের প্রাণটা কাঁদে।

 যে মৃদু নিশ্চেষ্টতার মধ্যে মানুষ কেবলি মধ্যাহ্নতন্দ্রায় ঢুলিয়া দুলিয়া পড়ে সেখানে মানুষের জীবন আপনার পুর্ণপরিচয় হইতে আপনি বঞ্চিত থাকে বলিয়াই তাহাকে এমন একটা অবসাদে ঘিরিয়া ফেলে। সেই অবসাদের জড়িমা হইতে বাহির হইয়া যাইবার জন্য আমি চিরদিন বেদনা বোধ করিয়াছি। তখন যে সমস্ত আত্মশক্তিহীন রাষ্ট্রনৈতিক সভা ও খবরের কাগজের আন্দোলন প্রচলিত হইয়াছিল, দেশের পরিচয়হীন ও সেবাবিমুখ যে দেশানুরাগের মৃদুমাদকতা তখন শিক্ষিতমণ্ডলীর মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল—আমার মন কোনোমতেই তাহাতে সায় দিত না। আপনার সম্বন্ধে আপনার চারিদিকের সম্বন্ধে বড়ো একটা অধৈর্য ও অসন্তোষ আমাকে ক্ষুব্ধ করিয়া তুলিত; আমার প্রাণ বলিত “ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন।”

 “আনন্দময়ীর আগমনে আনন্দে গিয়েছে দেশ ছেয়ে-

 হের ওই ধনীর দুয়ারে দাঁড়াইয়া কাঙালিনী মেয়ে।”

এ-তো আমার নিজেরই কথা। যে-সব সমাজে ঐশ্বর্যশালী স্বাধীন জীবনের উৎসব, সেখানে সানাই বাজিয়া উঠিয়াছে,