পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
জীবন-স্মৃতি

সেদিন সন্ধ্যাবেলায় আমাদেরই গলিতে মাস্টার মহাশয়ের সমানধর্মা দ্বিতীয় আর কাহারও অভ্যুদয় একেবারেই অসম্ভব?

 যখন সকল কথা স্মরণ করি তখন দেখিতে পাই, অঘোর বাবু নিতান্তই যে কঠোর মাস্টারমশাইজাতের মানুষ ছিলেন তাহা নহে। তিনি ভূজবলে আমাদের শাসন করিতেন না। মুখেও যেটুকু তর্জন করিতেন তাহার মধ্যে গর্জনের ভাগ বিশেষ কিছু ছিল না বলিলেই হয়। কিন্তু তিনি যত ভালোমানুষই হউন তাঁহার পড়াইবার সময় ছিল সন্ধ্যাবেলা এবং পড়াইবার বিষয় ছিল ইংরেজি। সমস্ত দুঃখদিনের পর সন্ধ্যাবেলায় টিমটিমে বাতি জ্বালাইয়া বাঙালি ছেলেকে ইংরেজি পড়াইবার ভার যদি স্বয়ং বিষ্ণুদূতের উপরেও দেওয়া যায় তবু তাহাকে যমদূত বলিয়া মনে হইবেই তাহাতে সন্দেহ নাই। বেশ মনে আছে, ইংরেজি ভাষাটা যে নীরস নহে আমাদের কাছে তাহাই প্রমাণ করিতে অঘোরবাবু একদিন চেষ্টা করিয়াছিলেন;—তাহার সরসতার উদাহরণ দিবার জন্য, গদ্য কি পদ্য তাহা বলিতে পারি না, খানিকটা ইংরেজি তিনি মুগ্ধভাবে আমাদের কাছে আবৃত্তি করিয়াছিলেন। আমাদের কাছে সে ভারি অদ্ভুত বোধ হইয়াছিল। আমরা এতই হাসিতে লাগিলাম যে সেদিন তাঁহাকে ভঙ্গ দিতে হইল; বুঝিতে পারিলেন মকদ্দমাটি নিতান্ত সহজ নহে—ডিক্রী পাইতে হইলে আরও এমন বছর দশ পনেরো রীতিমতো লড়ালড়ি করিতে হইবে।