পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
জীবন-স্মৃতি

তখন তাঁহার সমস্ত হাত মুখ চোখ কথা কহিতে থাকিত। ইনি সেকালের পারসিপড়া রসিক মানুষ, ইংরেজির কোনাে ধার ধারিতেন না। তাহার বামপার্শ্বের নিত্যসঙ্গিনী ছিল একটি গুড়গুড়ি, কোলে কোলে সর্বদাই ফিরিত একটি সেতার, এবং কণ্ঠে গানের আর বিশ্রাম ছিল না।

 পরিচয় থাক আর নাই থাক স্বাভাবিক হৃদ্যতার জোরে মানুষমাত্রেরই প্রতি তাহার এমন একটি অবাধ অধিকার ছিল যে কেহই সেটি অস্বীকার করিতে পারি না। বেশ মনে পড়ে তিনি একদিন আমাদের লইয়া একজন ইংরেজ ছবি- ওয়ালার দোকানে ছবি তুলিতে গিয়াছিলেন। তাহার সঙ্গে হিন্দিতে বাংলাতে তিনি এমনি আলাপ জমাইয়া তুলিলেন— অত্যন্ত পরিচিত আত্মীয়ের মতো তাহাকে এমন জোর করিয়া বলিলেন, ছবিতােলার জন্য অত বেশি দাম আমি কোনাে মতেই দিতে পারিব না, আমি গরিব মানুষ,—না, না, সাহেব সে কিছুতেই হইতে পারিবে না,—যে, সাহেব হাসিয়া সস্তায় তাহার ছবি তুলিয়া দিল। কড়া ইংরেজের দোকানে তাহার মুখে এমনতরো অসংগত অনুরােধ যে কিছুমাত্র অশােভন শােনাইল না তাহার কারণ সকল মানুষের সঙ্গেই তাঁহার সম্বন্ধটি স্বভাবত নিষ্কণ্টক ছিল—তিনি কাহারও সম্বন্ধেই সংকোচ রাখিতেন না, কেননা তাহার মনের মধ্যে সংকোচের কারণই ছিল না।

 তিনি এক-একদিন আমাকে সঙ্গে করিয়া একজন য়ুরােপীয় মিশনরির বাড়িতে যাইতেন। সেখানে গিয়া তিনি