পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
জীবন-স্মৃতি

 তখনো নিচে বসিয়া আছেন আমাদের নীলকমল পণ্ডিতমহাশয়; বাংলা জ্যামিতির বইখানা তখনো খোলা এবং মেঘনাদবধ কাব্যখানা বোধ করি পুনরাবৃত্তির সংকল্প চলিতেছে। কিন্তু মৃত্যুকালে পরিপূর্ণ ঘরকন্নার বিচিত্র আয়োজন মানুষের কাছে যেমন মিথ্যা প্রতিভাত হয়, আমাদের কাছেও পণ্ডিতমহাশয় হইতে আরম্ভ করিয়া আর ওই বোর্ড টাঙাইবার পেরেকটা পর্যন্ত তেমনি এক মুহুতে মায়ামরীচিকার মতো শূন্য হইয়া গিয়াছে। কি রকম করিয়া যথোচিত গাম্ভীর্য রাখিয়া পণ্ডিতমহাশয়কে আমাদের নিষ্কৃতির খবরটা দিব সেই এক মুশকিল হইল। সংযতভাবেই সংবাদটা জানাইলাম। দেয়ালে টাঙানো কালো বোর্ডের উপরে জ্যামিতির বিচিত্র রেখাগুলা আমাদের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকাইয়া রহিল;— যে মেঘনাদবধের প্রত্যেক অক্ষরটিই আমাদের কাছে অমিত্র ছিল সে আজ এতই নিরীহভাবে টেবিলের উপর চিত হইয়া পড়িয়া রহিল যে তাহাকে আজ মিত্র বলিয়া কল্পনা করা অসম্ভব ছিল না।

 বিদায় লইবার সময় পণ্ডিতমহাশয় কহিলেন-কর্তব্যের অনুরোধে তোমাদের প্রতি অনেক সময় অনেক কঠোর ব্যবহার করিয়াছি সেকথা মনে রাখিয়ো না; তোমাদের যাহা শিখাইয়াছি ভবিষ্যতে তাহার মূল্য বুঝিতে পারিবে।

 মূল্য বুঝিতে পারিয়াছি। ছেলেবেলায় বাংলা পড়িতেছিলাম বলিয়াই সমস্ত মনটার চালনা সম্ভব হইয়াছিল। শিক্ষা জিনিসটা যথাসম্ভব আহার-ব্যাপারের মতো হওয়া