পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
জীবন-স্মৃতি

চেষ্টা তাঁহার কিছুমাত্র ছিল না। তাঁহার বিশ্বাস ছিল লাঠি খেলায় তাঁহার যেমন আশ্চর্য নৈপুণ্য, সংগীতবিদ্যায় সেইরূপ অসামান্য পারদর্শিতা। আমাদের উঠানে রৌদ্রে দাড়াইয়া তিনি নানা অদ্ভুত ভঙ্গিতে লাঠি খেলিতেন—নিজের ছায়া ছিল তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী। বলা বাহুল্য তাঁহার ছায়া কোনো দিন তাঁহার সঙ্গে জিতিতে পারিত না—এবং হুহুংকারে তাহার উপরে বাড়ি মারিয়া যখন তিনি জয়গর্বে ঈষৎ হাস্য করিতেন তখন ম্লান হইয়া তাঁহার পায়ের কাছে নীরবে পড়িয়া থাকিত। তাঁহার নাকি বেসুরের গান প্রেতলোকের রাগিণীর মতো শুনাইত—তাহা প্রলাপে বিলাপে মিশ্রিত একটা বিভীষিকা ছিল। আমাদের গায়ক বিষ্ণু মাঝে মাঝে তাহাকে বলিতেন মুনশিজি, আপনি আমার রুটি মারিলেন।—কোনো উত্তর না দিয়। তিনি অত্যন্ত অবজ্ঞা করিয়া হাসিতেন।

 ইহা হইতে বুঝিতে পারিবেন মুনশিকে খুশি করা শক্ত ছিল না। আমরা তাঁহাকে ধরিলেই তিনি আমাদের ছুটির প্রয়োজন জানাইয়া ইস্কুলের অধ্যক্ষের নিকট পত্র লিখিয়া দিতেন। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এরূপ পত্র লইয়া অধিক বিচার বিতর্ক করিতেন না—কারণ তাঁহার নিশ্চয় জানা ছিল যে আমরা ইস্কুলে যাই বা না যাই তাহাতে বিদ্যাশিক্ষা সম্বন্ধে আমাদের কিছুমাত্র ইতরবিশেষ ঘটিবে না।

 এখন আমার নিজের একটি স্কুল আছে এবং সেখানে ছাত্রের নানাপ্রকার অপরাধ করিয়া থাকে—কারণ, অপরাধ করা ছাত্রদের, এবং ক্ষমা না করা শিক্ষকের ধর্ম। যদি