পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
জীবন-স্মৃতি

করিয়া এই আশ্চর্য সামগ্রীটি বউঠাকুরানীর কাছ হইতে চাহিয়া লইয়া প্রায় মাঝে মাঝে এই পাঞ্জাবিকে চমৎকৃত করিয়া দিতাম। ঘরের খাঁচায় বদ্ধ ছিলাম বলিয়া যাহা কিছু বিদেশের যাহা কিছু দূরদেশের তাহাই আমার মনকে অত্যন্ত টানিয়া লইত। তাই লেনুকে লইয়া ভারি ব্যস্ত হইয়া পড়িতাম। এই কারণেই গাব্রিয়েল বলিয়া একটি য়িহুদি তাহার ঘুণ্টি দেওয়া য়িহুদি পােষাক পরিয়া যখন আতর বেচিতে আসি আমার মনে ভারি একটা নাড়া দিত, এবং ঝােলাঝুলিওয়ালা ঢিলাঢালা ময়লা পায়জামাপরা বিপুলকায় কাবুলিওআলাও আমার পক্ষে ভীতিমিশ্রিত রহস্যের সামগ্রী ছিল।

 যাহা হউক, পিতা যখন আসিতেন আমরা কেবল আশ-পাশ হইতে দূরে তাঁহার চাকরবাকরদের মহলে ঘুরিয়া ঘুরিয়া কৌতূহল মিটাইতাম। তাহার কাছে পৌঁছানো ঘটিয়া উঠিত না।

 বেশ মনে আছে আমাদের ছেলেবেলায় কোনাে এক সময়ে ইংরেজ গর্মেণ্টের চিরন্তন জুজু রাশিয়ান কর্তৃক ভারত আক্রমণের আশঙ্কা লােকের মুখে আলােচিত হইতেছিল। কোনাে হিতৈষিণী আত্মীয়। আমার মায়ের কাছে সেই আসন্ন বিপ্লবের সম্ভাবনাকে মনের সাধে পল্লবিত করিয়া বলিয়া-ছিলেন। পিতা তখন পাহাড়ে ছিলেন। তিব্বত ভেদ করিয়া হিমালয়ের কোন একটা ছিদ্রপথ দিয়া যে রুশীয়ের। ধূমকেতুর মতো প্রকাশ পাইবে তাহা তাে বলা যায় না। এই