পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিমালয় যাত্রা
৮৫

কোনো বাধাই দিতেন না, যেখানে তিনি নিয়ম বাঁধিতেন সেখানে তিনি লেশমাত্র ছিদ্র রাখিতেন না।

 যাত্রার আরম্ভে প্রথমে কিছুদিন বােলপুরে থাকিবার কথা। কিছুকাল পূর্বে পিতামাতার সঙ্গে সত্য সেখানে গিয়াছিল। তাহার কাছে ভ্রমণ-বৃত্তান্ত যাহা শুনিয়াছিলাম উনবিংশ শতাব্দীর কোনো ভদ্রঘরের শিশু তাহা কখনােই বিশ্বাস করিতে পারি না। কিন্তু আমাদের সেকালে সম্ভব অসম্ভবের মাঝখানে সীমারেখাটা যে কোথায় তাহা ভালো করিয়া চিনিয়া রাখিতে শিখি নাই। কৃত্তিবাস কাশীরাম দাস এ সম্বন্ধে আমাদের কোনো সাহায্য করেন নাই। রংকরা ছেলেদের বই এবং ছবিদেওয়া ছেলেদের কাগজ সত্যমিথ্য-সম্বন্ধে আমাদিগকে আগেভাগে সাবধান করিয়া দেয় নাই। জগতে যে একটা কড়া নিয়মের উপসর্গ আছে সেটা আমাদিগকে নিজে ঠেকিয়া শিখিতে হইয়াছে।

 সত্য বলিয়াছিল বিশেষ দক্ষতা না থাকিলে রেলগাড়িতে চড়া এক ভয়ংকর সংকট-পা ফসকাইয়া গেলেই আর রক্ষা নাই। তারপর গাড়ি যখন চলিতে আরম্ভ করে, তখন শরীরের সমস্ত শক্তিকে আশ্রয় করিয়া খুব জোর করিয়া বসা চাই, নহিলে এমন ভয়ানক ধাক্কা দেয় যে, মানুষ কে কোথায় ছিটকাইয়া পড়ে তাহার ঠিকানা পাওয়া যায় না। স্টেশনে পৌছিয়া মনের মধ্যে বেশ একটু ভয় ভয় করিতেছিল। কিন্তু গাড়িতে এত সহজেই উঠিলাম যে মনে সন্দেহ হইল এখনো হয়তাে গাড়ি ওঠার অসিল নাই।