পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিমালয় যাত্রা
৮৯

খােয়াইয়ের মধ্যে একজায়গায় মাটি চুঁইয়া একটা গভীর গর্তের মধ্যে জল জমা হইত। এই জলসঞ্চয় আপন বেষ্টন ছাপাইয়া ঝির ঝির করিয়া বালির মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইত। অতি ছােটো ছােটো মাছ সেই জলকুণ্ডের মুখের কাছে স্রোতের উজানে সম্বরণের স্পর্ধা প্রকাশ করিত। আমি পিতাকে গিয়া বলিলাম-“ভারি সুন্দর জলের ধারা দেখিয়া আসিয়াছি, সেখান হইতে আমাদের স্নানের পানের জল আনিলে বেশ হয়।” তিনি আমার উৎসাহে যােগ দিয়া বলিলেন “তাইতো, সে তাে বেশ হইবে” এবং আবিষ্কারকর্তাকে পুরস্কৃত করিবার জন্য সেইখান হইতেই জল অনাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন।

 আমি যখন-তখন সেই খােয়াইয়ের উপত্যকা অধিত্যকার মধ্যে অভূতপূর্ব কোনাে একটা কিছুর সন্ধানে ঘুরিয়া বেড়াই- এই ক্ষুদ্র অজ্ঞাত রাজ্যের আমি ছিলাম লিভিংস্টোন। এটা যেন একটা দূরবীনের উল্টা দিকের দেশ। নদীপাহাড়-গুলােও যেমন ছােটোছােটো, মাঝে মাঝে ইতস্তত বুনন জাম বুনাে খেজুরগুলােও তেমনি বেঁটেখাটো। আমার আবিষ্কৃত ছােটো নদীটির মাছগুলিও তেমনি, তার আবিষ্কার-কর্তাটির তো কথাই নাই।

 পিতা বােধ করি আমার সাবধানতাবৃত্তির উন্নতিসাধনের জন্য আমার কাছে দুই চারি আনা পয়সা রাখিয়া বলিতেন হিসাব রাখিতে হইবে, এবং আমার প্রতি তাহার দামি সােনার ঘড়িটি দম দিবার ভার দিলেন। ইহাতে যে ক্ষতির