পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জেঠমা আচমকা ঘরে আসে, প্ৰতিমার জেঠমাই সংসারের কত্রী। রোগ ফরসা শুদ্ধ মূৰ্ত্তি, চ্যাতালো মুখখানায় ভদ্র ঘরের গৃহিণীপনায় প্ৰৌঢ়ী হবার ভ্রান্ত বিষাদের সৌম্যতা, কপালে ডগডগে। লাল সি দুরের মস্ত ফোটা, চুলওঠা সিঁথিতে কিন্তু সিঁদুর প্রায় নেই। সিঁদুর লেগে চুল ঝরে যায়-কার কাছে। এ কথা শোনার পর থেকে সিথির সিন্দুর কপালের ফোটায় নামিয়ে জেঠমা চুলকে রেহাই দিয়েছে। ঘরে ঢুকে সে দেখতে পায় মেয়ে তার তাকিয়ে আছে জানলার দিকে, টিপয়ে এলানো পিতুর বা হাতের আঙ লগুলি অমিতের থাবার আঙুলে আটকানো। এই হাতে মেলানো হাত স্থগিত করে দেয় তার রণরঙ্গিণী মূৰ্ত্তিতে আবির্ভাবের উদ্দেশ্য, মুখোমুখি খোলাখুলি প্ৰচণ্ড আক্রমণে অমিতাভকে ঘায়েল করা । অমিত যে ! কখন এলে, কেমন আছ বাবা ? ওমা, দুধের কড়া চাপিয়ে এসেছি। উনুনে ! হার মেনে নয়, জয়ের আশায় জেঠিম যেন পালিয়ে গেল তাদের ছেড়ে । আমি সব ভেবেছি পিতৃ। চারিদিক বিবেচনা করে আমি শেষ সিদ্ধান্ত করেছি। সব কথা ভেবে চিন্তে আমার কথাও ? জানালার বাইরে জোর বাতাসে দোল খাওয়া গাছপালার দিক থেকে এমন ভাবে মুখ ফিরিয়ে লালচে চোখে এমনি কটমট করে তাকায় প্রতিমা পেছনে মাথা হেলিয়ে আঘাত করার উদ্যত ভঙ্গিতে যে মুগ্ধ হয়ে মাথা গুলিয়ে যায় অমিতাভের । তাই বলে প্ৰতিমা রেয়াৎ করে না, ঘা মারে। কি তিক্ত তার গলার আওয়াজ, ওই সুঠাম গল, ঘাড়ে নামা বাকের মাঝামাঝি যেখানে তার একটি আঁচিলের মত নীল জন্মচিহ্ন । আমার কথাও তুমিই ভেবেছ! ভেবে চিন্তে তুমিই ঠিক করেছ। আমাকে কি করতে হবে। শোনাও হুকুম, শোনাও ! এত বেশি বাড়াবাড়িতে একটু তখন চটে যায় অমিতাভ । হাতে গাঁথা হাত দুটি পড়ে আছে টিপয়ের আশ্রয়ে, অ্যাসট্রেতে নামিয়ে রাখা জ্বলন্ত S)8bም