পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলবে না। অমিতকে কোথায় রেখেছ, রাত দুটাে পৰ্যন্ত সাধিলাম। তুমি না বললে সে বলতে পারবে না। তুমি কোথায় আছ তাও বলবে না। শেষকালে যখন বললাম তোমার খবর না দিলে সোজা থানায় গিয়ে যা জানি সব প্ৰকাশ করে সুইসাইড করব, তখন জানাল। এসব কি ছোটমামা ? আমি কি তোমাদের পর ? তোমাদের বুদ্ধি বিবেচনা কিছু নেই! যাকে বিশ্বাস করতেই হবে জানো তাকেও অবিশ্বাস কর। কি লুকানো আছে अभिांद्र कांgछ ? শঙ্করের দোষ নেই। আমিই বারণ করেছিলাম, দু-চারদিন তোকে যেন কিছু না জানায়। ক'দিন পরে সব কিছুই তুই জানতে পেতিস পিতৃ। মৃদুস্বরে ভীরুর মত কথা বলে কালীনাথ, প্ৰতিমার মুখের দিকে তাকায় না, সে যেন পিস্তল বাগিয়ে রাইফেলের সঙ্গে লড়াই করা শক্ত কঠোর মানুষটি নয়। হৃদয়মনের এ কোমলতা তার কেন আছে কি করে থাকে কালীনাথ জানে না। বিপন্ন বিচলিত হয়ে থাকে। কি করে এখন যে মেয়েটাকে জানায়, জগতের সব বীরত্ব সব পৌরুষের পালা শেষ হয়ে গিয়ে যখন শেষ রাতটা মড়ার মত নিঝুম হয়েছে, স্পষ্ট শুধু অনুভব করা যাচ্ছে প্ৰতিমার বুকের ধুকধুকানি । ক’দিন পরে কেন ছোটমামা ? এ অসহ্য হয়ে ওঠে কালীনাথের। তাই যতদূর সম্ভব মোলায়েম করে অল্পে অল্পে সইয়ে সইয়ে বলবে ঠিক করেও আগুয়ান পুলিসদের লক্ষ্য করে। যেমন দ্বিধামাত্র না করে আচমকা বুলেট ছুড়েছিল, তেমনি সাদামাটা বাস্তব ঘোষণার মত সে সোজাসুজি খবরটা বলে বসে, অমিত মারা গেছে। বলে যেন বঁাচে । নিজেকে ফিরে পায়। এই ভাল। এমনি করে বলাই উচিত হয়েছে, একটা মরণের খবর জানাতে সে-ই বা কেন বিব্রত হবে, খবর শুনে প্ৰতিমাই বা কেন ব্যাকুল হবে ? প্ৰতিমা ব্যাকুল হয় নিশ্চয়, তবে তার ব্যাকুলত দিয়ে মোটেই বিব্রত করে না কালীনাথকে। বরং পাথরের মূৰ্ত্তির মত অনড় অচল হয়ে বসে থাকার জন্যই কালীনাথ বিব্রত বোধ করে বেশি। Set