পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিসে? ও! এখন ওসব তর্ক থাক পাকা। তর্ক নয়, কালীদা যে বলে জেনে শুনে দশজনে জাগবে, পথ পাবে। সবাই বিদ্রোহ করবে। কিন্তু লোকে তো কিছু জানতেই পারছে না। অমিতদা প্ৰাণ দিল, সেটাও গোপন রাখতে হবে। এসব কথা থাক পাকা। গোপন কিছু থাকবে না, গোপন কি থাকে ? তার এই কথাকে প্রমাণ করার জন্যই যেন পুলিস তাদের ঠেকাল। স্টেশনে বাস থেকে নেমে দুজনে তারা একটা ছ্যাকড়া গাড়ী ভাড়া করে উঠে বসেছে, হাড়-বোর-করা রুগ্ন ঘোড়া দুটাে চাবুক খেয়ে প্ৰাণপণ চেষ্টায় গাড়ীটা টানতে শুরু করেছে, একসঙ্গে দুদিকের পদানিতে উঠে দাঁড়াল দুজন লোক, রিভলবার বাগিয়ে। সঙ্গে তাদের আট-দশ জন পুলিস, সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা ঘিরে ফেলেছে। এরকম জবরদস্ত বাহিনী ছাড়া একটা ছেলে আর মেয়েকে ওরা ধরতে পারে না, এমনি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ওদের কাছে টেররিস্টরা । শুধু পাকাকে ওরা চাইছিল, পাকার সঙ্গে থাকায় প্রতিমাকে ধরেছে। পাকাকে পুলিসের দরকার হয়েছিল বিশেষ কারণে, ফাসিতে লটকাবার জন্য নয়। পাকা দলের ভেতরে নেই, হাতে নাতে কাৰ্য্যকলাপে যোগও দেয় না, অথচ সে খামখেয়ালী ছেলের কাছ থেকে সহজে খবর আদায় করা যাবে। এ রকম একটা ধারণাও তাদের হয়েছে। এটা হয়েছে রায় বাহাদুর এন, এন, ঘোষাল গত বার কলকাতা ফেরার সময়। পাকার ওপর একটু নজর রাখতে বলে যাবার ফলে। পাকার এলোমেলো খাপছাড়া চাল চলন তাদের নজরে পড়েছে। এটা যে পাকার নিজস্ব ব্যক্তিগত দিক, গঙ্গা কামারের কামারশালায় দু-চার ঘণ্টা বসে থাকা, টো টো শহরে পাক দেওয়া, দুপুর রাতে চামার বস্তিতে আডিডা দেওয়া বা নিৰ্জন প্ৰান্তরে ঝরনার ধারে বসে কাব্য করার সঙ্গে স্বদেশী দলের ভেতরের খবর জানার কোন সম্পর্ক নেই, এটা জানা ছিল না পুলিসের। সত্য কথা বলতে কি, স্বদেশী দলের বোমা তৈরি-টৈরির মত দু-একটা কাজ ছাড়া সব কিছু যে কত দূর সাধারণ আর স্বাভাবিক ভাবে চলে, সে ধারণাই তাদের Sዓፍ .