পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফেরার আগে বিকালের দিকে পাচু ভৈরবের বাড়ীতে পাকার খবর আনতে যায়। এ বাড়ীতে সে অচেনা নয়, কিন্তু পাকা নেই, কে আদর করে বসাবে! পাকা ? পাকা নেই। কোথায় আছে ? কে জানে, ক’দিন আগে শ্ৰীনগর থেকে একটা চিঠি এসেছে। সাইকেলের দোকানে কানাই কেরোসিন তেলে ফ্রি-হুইল সাফ করছিল। পরীক্ষা দিয়ে সেও দোকানের কাজে বেশি মন দিয়েছে। তারও লেখাপড়া সম্ভবত এই ম্যাটিকুলেশনেই সমাপ্তি। নলিনী দারোগার বৌয়ের গয়নাডাকাতির ব্যাপারে মারধোর খেয়ে কানাই-এর জর এসেছিল, ডাকাতির ধাক্কাও গেছে তার ওপর দিয়ে। মার খেয়েছে, মাস দুই আটক থেকেছে, এখন আছে নজরে নজরে, মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক পড়ে। শুধু সন্দেহ, সন্দেহজনক গতিবিধি আর মেলামেশা ছাড়া তার রেকর্ড নির্দোষ, নিষ্পাপ। তার চেয়ে বরং পাকার রেকর্ড খারাপ ছিল। অথচ পাকাকে শুধু দলের বন্ধু বলা যায়, দলের ঘনিষ্ঠ সক্রিয় কৰ্ম্মী। কানাই শান্ত শক্ত, চাপা ছেলে । যেটুকু তার ছেলেমানুষী ছলকে বেড়ানো, সে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে মেলমেশার জন্য, তার দলের খাতিরেই। দলের জন্য উপযুক্ত ছেলের প্রাথমিক খোজ আর বাছাই তার কাজ। এত ঘনিষ্ঠভাবে মিশেও এজন্য পাকা তাকে কখনো বুঝতে পারে নি, একসঙ্গে বিড়ি তামাক টেনে আডা মারার মধ্যেও তার চরিত্রের একটা গোপন কঠোরতা তাকে পীড়ন করেছে, তাকে ত্যাগ করে দূরে সরে যাওয়ার জালায় জ্বালায় কাবু হয়েছে। কোন গুণে কানাইকে কালীনাথ তার চেয়ে বিশ্বাস করেছে, বেশি মূল্য দিয়েছে পাকা কখনো ভেবে 에f f( | কিন্তু পাচু খানিকটা অনুমান করতে পারে। ভাবপ্রবণতায় তার বিচারবুদ্ধি ঝাপসা নয়। তা থেকেই এসেছে সংসারে সাধারণ চালচলনের রীতিনীতিবোধ। কানাইয়ের গোপন বিপ্লবী জীবন একটা আছে আন্দাজ করেও কোন দিন সে তাকে কোন প্রশ্ন করে নি । আজ বিচার বিবেচনা করে সে শুধায় : কালীদা ধরা পড়ে নি, না ? की । Տէրճ»