পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছাড়া। মনের তলা থেকে তার হাতে টান লাগে জলন্ত বিড়িটা পিছন দিকে সরিয়ে ফেলতে নয়তো ফেলে দিয়ে জুতোর নীচে পিষে ফেলতে। কিন্তু বিড়ি লুকনোটা হবে কালীদাকে ফাকি দেবার চেষ্টা। বিড়ি ফুকলেও হবে কালীদা’কে অসম্মান করা। তাই রফা সে করে বিড়িটা মুঠতেই একটু আড়াল করে ধরে রেখে । প্ৰৌঢ়বয়সী সম্রান্ত ভদ্রলোক কালীনাথ নয়, বছর সাতাশ বয়সের যুবক মাত্র, ধুতি আর হাতকটা শার্ট পরা সাদাসিদে বেশ, শক্ত ব্যায়ামী শরীর, ধীর পদক্ষেপ । ছেলেদের কাছে কিন্তু অনেক গুরুজনস্থানীয় সম্রান্ত ভদ্রলোকের চেয়ে তার শ্রদ্ধা ও সম্মান বেশি। গত আন্দোলনে যোগ দিয়ে মাসিকয়েকের জন্য জেলে গিয়েছিল। ফিরে এসে চরকাব্রতীদের টিমে রাজনৈতিক কাৰ্য্যকলাপ থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে মন দিয়েছে। একটা ব্যায়াম-সমিতি করেছে ছেলেদের জন্য, ডন বৈঠক সাতার কুস্তি বক্সিং ছোরা খেলা যুযুৎসু সবকিছু শেখানো হয়, চরিত্র গড়া হয়। আর মানানো হয়। কঠোর ডিসিপ্লিন। অনেক কিশোরের মা-বাবা, ছেলেকে হঠাৎ মেয়ের মত লাজুক হয়ে উঠে শুকিয়ে চিমসে মেরে যেতে দেখে যারা ভড়কে গিয়েছিল, ছেলে ব্যায়াম-সমিতিতে যোগ দেওয়ার পর আবার তার চোখ-মুখে স্বাস্থ্যের জ্যোতি ফুটতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। একটা সেবাসজেঘর পিছনেও কালীনাথ আছে। গত বন্যায়। এই সঙ্ঘের রিলিফের কাজ দেখে বড়রাও কালীনাথকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে। শুধু শ্ৰদ্ধা নয়, সকলে একটু ভয়ও করে তাকে। দু’দণ্ড তার সঙ্গে মিশলে মানুষ টের পায়, শুধু তেজী সাহসী ত্যাগী নয়, কাজের নিষ্ঠায় চরিত্রের দৃঢ়তায় লোহার মত শক্ত নয়, কি যেন প্ৰচণ্ড একটা শক্তি আছে তার মধ্যে, ভয়ঙ্কর আবেগের জমানো বিস্ফোরক। তাকে ঘিরে একটা রহস্যের আবরণ নামে অনুভূতিগত কল্পনায়। মনে হয়, সে বুঝি বিপজ্জনকও বটে। কালীনাথের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করে। পাকা । ওর সামনে সে নার্ভাস হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে তার মধ্যে প্ৰবল একটা বিদ্রোহের ভাবও জাগে। হঠাৎ অবাধ্যতার অবজ্ঞায় মানুষটাকে হুট করে উড়িয়ে দিতে প্ৰচণ্ড তাগিদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। 8