পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধনদাসকে । দু'চোখ ভরা স্নেহ আয় শ্ৰদ্ধা মৰ্যাদা ধনদাস ছেলের সর্বাঙ্গে মাখিয়ে দিতে থাকে, মুখে কিন্তু তেমনি টিটকাদির স্কুরেই বলে, অ্যাং যায়, ধ্যাৎ যায়, খলসে ঘলে মুইও চলি ! বাৰুৱা বোমা পিস্তল দে সাহেব মায়ে, তুই স্বা’ নিয়ে ছোটু, দারোগা মেরে আয় । এ তো শুধু টিটকারি নয়, বাস্তব জ্ঞানবুদ্ধির কথাও বটে। যে এভাবে লাঞ্ছনা করেছে তায় পাচুকে, তাকে যদি উচিত শিক্ষা দেওয়া যায় ধনদাস খুশিই হবে, কিন্তু শিক্ষা দেওয়া যায় কি-না সেটা তো দেখতে হবে। একজন অকারণে ছ্যাচ দিয়েছে বলেই তো রাগের মাথায় দিক্‌বিদিক জ্ঞান হারিয়ে পাথরে মাথা ঠুকে মরা যায় না, আগুনে ঝাপ দেওয়া যায় না। সাধ হলেই তো প্ৰতিশোধ নেওয়া যায় না সদর থানার প্রবল প্ৰতাপ দারোগার ওপর শুধু তাই নয়, আরও হিসাব আছে। অসম্ভব সাধকে ফেনিয়ে ফেনিয়ে পাগল হওয়া, প্ৰতিকারহীন জ্বালায় নিজে জ্বলে পুড়ে খাক হওয়া, স্রেফ বোকামি। রাগের জালায় এরকম পাগলের মত যে করছে পাচু, গায়ে কি আঁচড়টি লাগছে নলিনী দারোগার, কোন দিন লাগাবার সম্ভাবনা আছে ? এসব কথা মুখ ফুটে বলতে হয় না। ধনদাসকে, পাচুরও ভাল করেই এসব জানা আছে, ধনদাসের টিটকারি শুধু মনে পড়িয়ে দেওয়া বৈ তো নয়। পাচুর উগ্ৰ প্ৰচণ্ড রূপ ঝিমিয়ে আসে, সে গুম খেয়ে থাকে, কিন্তু ক্ষোভ তার কমে না, তার উতলা ভাব যায় না। সে শান্ত হবে, তার রাগ জুড়িয়ে যাবে, এ আশা অবশ্য ধনদাসও করে নি। মোর যা হবার হবে । নয় মরব। মরলে কি হয় ? কি হয়। কচু হয়। জ্ঞানদাস ভারি গলায় নিবিড় সহানুভূতির সঙ্গে বলে, মরা কিছু লয় বাপ ! মরণকে সবাই ডরায়, আঁধারকে ডরায় না ? দরকার পড়লে ঘোর আঁধারে বনবাদাড়ে যায় মানুষ, মরণকেও বরণ করে। ফল যদি হয় তো মরু না কেনে তুই, হাজার বার মরূগে’ যা, কে বারণ করেছে ? আর কিছু হোক বা না-হোক উয়ার গায়ে কঁাটা বিধিয়ে তো মরবি, না কি ? বোকার মত মরাই সার হবে, সেটা কাজের কথা লয়। মনে মনে উদ্বিগ্ন হয়েছে ধনদাস, গভীর দুশ্চিন্তা ঘনিয়ে এসেছে। কে জানে S8