পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষ, বিশেষ করে সুভদ্ৰা, টুকিটাকি অনেক জিনিস সঙ্গে দিতে চেয়েছিল, পাচু সব বাদ দিয়েছে। বিশেষ একটি বিলাসের কঁথা সেলাই করছিল সারদা, তিন-চার বছরের ছেড়া শাড়ির পাড় জমিয়ে, তাতে তার সম্বল একটি বাড়তি শার্ট, পুরনো একটি স্থতির কোটি আর দু’খানা ধুতি, কিছু চিড়ে আর এক টুকরো পাটালি বেঁধে ছোটখাট পোটলাট বগলে করে সে রওনা দেয়। রাধানগরের হাটের কাছে সাতটায় সদরের বাস মেলে। কানাই-এর বাড়ীতে দিনটা কাটিয়ে রাত দশটায় ট্রেন ধরবে, এই উদ্দেশ্য । কানাই এবারও খুশি হল । পালিয়ে যাবার সাধ সে দমন করেছে, কালীনাথের বারণ। দু'দিন আগে হঠাৎ ঘরবন্দীর হুকুম তুলে নেওয়া হয়েছে, সকাল-বিকেল থানায় শুধু হাজির দিতে হবে। কাজটা নাকি পাকার। নতুন মামীর যোগাযোগে সে অনন্তের জীবন অতিষ্ঠা করে তোলে, তার বন্ধুর ওপর মিছেমিছি জুলুম হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে খবর নিয়ে অনন্ত কোথায় কি কল টিপেছে সে-ই জানে, শিথিল হয়ে গেছে বিনা বিচারে মানুষের জন্মগত অধিকার খর্ব করার নির্লজ বাধন । 甲 দেখলি তো ? পাচু খুশি হয়ে বলে, পাকার সত্যি টান আছে। কানাই। কিন্তু খুশি নয়, তাকে স্বাধীনভাবে শহরে চলাফেরা করতে দেখে সাইকেলের দোকানে খদের আসতে আরম্ভ করছে, তবু কানাই এতটুকু কৃতজ্ঞ নয়। বলে, সব ব্যাপারে ন্যাকামি, সেনটিমেণ্টাল ভূত ! কে বাবা তোকে মাথা ঘামাতে বলেছে আমার জন্যে ? পাকা আর জাতে উঠল না। কানাই-এর কাছে। মুখ বুজে থাকার জন্যে মার খেয়ে হাড় গুড়ো হয়ে গিয়েও নয়, ওটা যেন কানাই-এর কাছে সাধারণ স্বাভাবিক কাজ। মুখ খুললে অমানুষ পশু হয়ে যেত। পাকা, সে তা হয় নি, শুধু এইটুকু! পিচুর কাছে পাকার বিচার অন্য মাপকাঠিতে, কানাই-এর কঠোরতা তাই তাকে আহত করে না, মুশকিলেও ফেলে না। দুরন্ত অবাধ্য বেপরোয় পাকার কাছে কঠিন সংযম চাইতে পারে কানাই, পাচু চায় না। ভাবপ্রবণ। হৃদয় থাকলেই মানুষ ভাবপ্রবণ হয়। তাকে ন্যাকামি বলে না। পাকার সম্পর্কে কালীনাথ-কানাইদের বিচার পাঁচু সোজাসুজি অগ্রাহ করে, পাকাকে Je I (*g)ー〉8