পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাচু জল হয়ে যায়, লজ্জা পায়। বলে, ও বাবা, এমন মেয়ে ! ওই তো, কানাই বলে, ফের উণ্টো বুঝলি। এমনি মেয়ে খারাপ নয়, বাড়ীর দোষে একটা দোষ পেয়েছে। তাও শুধরে আসছে আস্তে আস্তে । সারা পথ মনটা তরফাতে থাকে। পাচুর, রেলে ঘুমিয়ে কাটে, ষ্টিমারে দিনের বেলা নিজের ওপর বিরাগ নিয়ে কাটে। স্কুলে যেমন এখনো তেমন, বার বার তার কাছে স্পষ্ট হয়। পাকাদের কানাইদের সঙ্গে কাপে কাপে খাপ খায় না, সে অযোগ্য। ষ্টিমার যেমন বিশাল নদীতে ভেসে চলে, অজানা আশ্চৰ্য্য নদী, মন তার তেমনি ভেসে চলেছে চিন্তা-সাগরে ৷ সাগর কি-না কে জানে, হয়তো পুকুর হবে কিংবা ডোবা, মুখু চাষার মুখু্য ছেলে সে। নিজের দীনতায় হীনতায় পাচু কাতর হয়ে থাকে। শুধু শ্যামল যেন সেই আটুলিগার বনের ধারের মাটির ঘর থেকে মানুষ-বোঝাই নদীর জাহাজে তাকে অনুসরণ করে। কাজ বল, পড়াশোনা বল, শ্যামলকে তো কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারবে না, কালীনাথ বা কানাই। রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই শ্যামল তাকে বুঝতে শিখিয়েছে, কি আগ্রহে শিখিয়েছে! কেন সে তবে কিছুই বুঝবে না ? আসলে এটা তার পাকার কাছে শেখা, আত্মগত এই প্রক্রিয়াটা, মনগড়া আত্মচিন্তার এই ব্যাকুলতা যে তার ওদেরই কাছ থেকে ধার করা, যাদের কাছে সে তুচ্ছ বলে ভাবছে নিজেকে, তাও পাচু জানে না। পাকার এরকম সর্বদাই ঘটছে। পাচুর মাঝে মাঝে হয়। কানাই উগ্ৰ বিদ্রোহ নিয়ে মরিয়া হয়ে কেটে বেরিয়ে গেছে, সে বলে, আমার বয়ে গেল। বলে, যা করব ঠিক করেছি, যা শুরু করেছি, তাই করে যাব-চুলোয় যাক দ্বিধা সংকোচ ভাবনা চিন্তার দোদুল দোলা ! স্কুল-জীবনের নিত্যকার সমীকরণের মধ্যেও তিন বন্ধু এই রকমই ছিল, তাদের বন্ধুত্বের জমাট করা মোট রূপটা ছিল এই দিয়েই গড়া। স্কুলের বঁাধন আর প্রতিদিনের মেলামেশা শেষ করে নিজের নিজের কেন্দ্রে কিছুটা তফাৎ হওয়া মাত্র তারা পরস্পরের পরিচয় প্রতিফলিত করছে। তাদের যোগসূত্র অবশ্য দেশজোড়া সন্ত্রাসী আন্দোলন, তাদের ঘনিষ্ঠতাও ওই অসহ ক্ষোভের চরম প্ৰকাশেরই আর একটা রূপ। তা না হলে, কে পাকা, কে RSR