পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখ শুধু ওই চওড়া কপাল আর খাঁজকাটা চিবুকের জন্যই এমন আশ্চৰ্য্য রকম দৃঢ়তা আর কঠিন্তের ব্যঞ্জনা পেয়েছে। কানাই বলে, কখন এলে অমিতাদা ? আজ সকালে। তুমি ভৈরববাবুৱা ভাগ্নে প্ৰকাশ, না ? ঘাড় হেলিয়ে সায় দিয়ে প্ৰকাশ। ওদিকের বেঞ্চে গিয়ে বসে। কারো কাছ থেকেই গায়ে-পড়া দাদাত্ব তার ভাল লাগে না। সে অমিতাভই হোক, আর কালীনাথই হোক । বনমালী। দু’কাপ চা । কানাই এসে পাশে বসলে পাকা কথা বলে যায়, আগের কথারই জের টেনে। এটার কেন, ওটার মানে, সেটার কারণ। এই বয়সেই জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার যেন সীমা পরিসীমা নেই তার। সংসারে সব সে জেনে গেছে ! মেয়েদের পর্য্যন্ত ! একটানা বলে যায়, কানাইকে শোনাচ্ছে না নিজেকে শুনিয়ে বলছে, নিজের কাছে কথাগুলি সাজিয়ে গুছিয়ে ধরে নিজেই ভাল করে বুঝবার চেষ্টা করছে, ঠিক বোঝা যায় না। নিজের কথা বলতে বলতে সে টেনে আনে ভদ্র জীবনের অজস্র ফাকি মিথ্যা ও নোংরামির কথা আর হঠাৎ শুরু করে যৌন-বিজ্ঞান । পাকার এই পাকামি ছেলেদের কাছে তাকে প্ৰায় মহাপুরুষ করে দিয়েছে। গোপনে গোপনে কথা তারাও বলে-এত বেশি বলে যে শুনলে বড়রা থ’ ব’নে যেত। বড় হয়ে মানুষ ছেলেবেলার কথা ভুলে যায়। মেয়ে-পুরুষের রহস্যময় ব্যাপার এবং তার নানারকম বিকার নিয়ে কিছু জানা কিছু শোনা আর বানানো আলাপে ছেলেরা পারিবারিক জীবনের কত দৈন্য আর কৃত্রিমতা যে ফুটিয়ে তোলে! ফ্রয়েভীয় অপব্যাখ্যার বদলে সামাজিক মানে খুজিলে ভদ্রসমাজকে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়তে হত। পাকার গোপনতা নেই, যেন কৌতুহলও নেই। প্ৰাণের বন্ধুর সঙ্গে চুপি চুপি যে আলাপে অন্যের মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়, তার দাশগুণ নিগৃঢ় কখা পাঙ্কা নির্বিচারে বলে যায়। যেন, শুধু জানে বোঝে নয়, জানা বোঝারও অনেক উর্কে উঠে গেছে। S8