পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৌতুহলের চেয়ে যেন তার ঘর-সংসার আপনজনদের কথা জানিবার আগ্ৰহ বিমলিরই বেশি। তার বাড়ীর অবস্থাটা বিমলি আঁচ করতে চায়, পাকা বোঝে। সে ছেলেমানুষ, রোজগার করে না, বড়লোকের ছেলে হলে হয়তো কিছু বাগাবার ভরসা থাকবে । ছেলেমানুষকে ভোলানোও হবে সহজ। তাকে সরল, লাজুক, ভাল ছেলে বলে জেনেছে বিমলি। একটু ভীরুও হয়তো ভেবেছে । মেয়েদের সঙ্গে কারবার করতে জানে না, একেবাৱে অভিজ্ঞতা নেই, ঠাহর করে নিয়েছে। তাই তার মন ভোলাতে কথা কইছে আদুরে সুরে, হাসি তামাশায় তাকে ভরসা দিচ্ছে, ঢং করছে, নিজেকে দেখাচ্ছে। * ইস, আশায় পেয়েছে ওকে, আশা ! আট গণ্ডা পয়সা পেয়েছে মোটে তার কাছে, কিন্তু আশা করছে। ভবিষ্যতের । বয়স কম হয় নি, কতকাল ধরে কত মানুষের কাছে কত আশা করে করে এসেও এ পৰ্য্যন্ত বিস্তু-চাকরানীর চেয়ে অবস্থা ভাল হয় নি, আজ অল্পবয়সী নতুন রকমের একটা মানুষ পেয়েই ফের ভীষণভাবে আশা করতে শুরু করেছে ! ও কি সত্যই এমন বোকা যে ভাবতে পারছে তামাটে রঙের ওই গোলগাল শরীর, ওই তেলচিাট মুখ নিয়ে তাকে ভোলাতে পারবে ? ধাঁধার মত লাগে ব্যাপারটা পাকার কাছে। মানে বুঝে উঠতে পারে না বিমলির ব্যবহারের। এদিকে রাত বাড়ছে। তাগিদ বাড়ছে আট গণ্ডা পয়সায় ভাড়া খাটা শেষ করার । ভূমিকা শেষ করে হঠাৎ বিমলি যে ব্যবহার করে তার বীভৎসতার ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে বেরিয়ে যেতে হয়, হতবুদ্ধি ভাবটা একটু সামলে নেবার পর সাম্প্রতিক ধাধাটার একটা জবাব মনে আসে। পাকার। মনের জিজ্ঞাসার জবাব টেনে আনাটা তার স্বভাব। ছেলেবেলা থেকে মনটা তার 'কেন'র পোকায় ভৱতি, ছোট-বড় সাধারণ-অসাধারণ সব ব্যাপারেই সে জিজ্ঞাসু, যখন যে 'কেন' টা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তার একটা লাগসই ব্যাখ্যা খুজে বার না করলে তার চলে না, মানসিক অসাধ্য সাধনের চেষ্টায় শরীর খারাপ হয়ে যায়। VS