পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তো স্বদেশী ! তার চেয়ে মা’র স্মৃতিরক্ষা করে ভাল হয়েছে। চারিদিক { বজায় থেকেছে । হঠাৎ ডাকা জরুরী সভা, সভ্যেরা কিন্তু গাদাগাদি করে এসেছে। শহরের: উকিল ডাক্তার চাকুরে পেন্সনভোগী ভদ্রলোকেরা। ঘর জোড়া মন্ত লম্বা টেবিলের চারিদিকে ঘিরে বসেছে প্ৰায় পঞ্চাশ জন বিশিষ্ট সভ্য। কয়েকজন সাধারণ ও অল্প-বিশিষ্ট সভ্যকে দেয়াল ঘেঁষে বেঞ্চি পেতে বসতে দেওয়া হয়েছে, তারা কিন্তু দাড়িয়েই আছে। এদের মধ্যে অনেকে হয় সময়মত এসে চেয়ার বা বেঞ্চ দখল করতে পারে নি, অথবা মুরুবি গোছের বিশিষ্ট মানুষ দেখে সবিনয় হাসির সঙ্গে আসন ছেড়ে দিয়ে ভদ্রত রক্ষা ও আত্মরক্ষা করেছে। বাইরের বারান্দার দুটি বড় বড় দরজায় ভিড় করে দাড়িয়ে আছে একদল ছেলে । একটি ছেলে বসে আছে। ঘরের মধ্যে, টেবিলের একমাথায় মান্যগণ্য ভদ্রলোকদের সঙ্গে চেয়ারে। বাড়ন্ত গড়নের একটু কাঠখোট্ট চেহারা ছেলেটির, বয়স অনেক বেশি মনে হয়। মুখে বয়সের ছাপটা ঠিক ধাধার মত, আদুরে কচি ছেলের ঢল ঢল কোমলতার সঙ্গে এমন খানিকটা পাকা বখাটে ভাব মিশে আছে যে, তার মধ্যে যখন যেটা চোখে পড়ে সেটাকেই খাপছাড়া মনে হয়। ছেলেটির নাম প্ৰকাশ, হাই স্কুলে সেকেণ্ড ক্লাসে পড়ে। এই প্ৰকাশ্য সভায় আজ প্ৰকাশের এক গুরুতর অপরাধের বিচার হবে এবং বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা হবে। শাস্তি যা দেবার সেটা অবশ্য ভৈরব নিজেই দেবে ; তার ভাগ্নের কান মলতে বা তাকে বেত মারতে অন্য কেউ হাত তুললে সেটা উলটে হবে ভৈরবের অপমান। ভৈরব না নিয়ে এলে এ বেসরকারী আদালতে ; বজাত ছোড়াকে বিচারের জন্য হাজির করবার ক্ষমতাই বা ছিল কার ? ? ভৈরব ব্যাপারটা গ্ৰাহ না করলে অবশ্য অন্য ব্যবস্থা হত। ভৈরব নিজেও টের - পেত। এত বড় ব্যাপারটা উপেক্ষা করার মজা। ভৈরব আর ভুবনের মধ্যে আছে সামাজিক মান-কষাকষি। মান থেকে মন। যারা ভুবনের কাছে বসেছে, নীচুগলায় জোর দিয়ে তারা বলে, সহজে ছাড়বেন না। কিন্তু। ঘাটা যেন ভৈরবেরও লাগে। তফাত থেকে উঠে এসেও দু-একজন তাকে প্ৰায় এই কথাই বলে যাচ্ছে। আগেও অনেকবার বলেছে। R