পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কানাই চুপ করে গম্ভীর হয়ে থাকে। অন্য একটি ছেলের সঙ্গে পাকার অনেক পরে কানাই থিয়েটার দেখতে এসেছে। এসেই একেবারে বসে পড়েছে জায়গা দখল করে। তাদের যেন বসে দাড়িয়ে সামনে থেকে বা স্টেজের ভিতরে গিয়ে থিয়েটার দেখার কখনো অসুবিধা হয়, সাজঘরে ঢুকে আড়ালের ব্যাপারগুলি দেখবার ইচ্ছা হলেও কেউ ঠেকাতে পারে। কানাইয়ের সঙ্গের ছেলেটিকে চেনে না পাকা । সিগ্রেট টেনে আসি চ’ । নাঃ, কানাই বলে একান্ত অবহেলার সঙ্গে, ছেড়ে দিইছি। ধোয়া গিলে স্বাস্থ্য নষ্ট করে লাভ ? মিছিমিছি পয়সা নষ্ট । কানাইয়ের মুখে এমন গুরুজনী কথা! পাকা একটু হেসে সরে যায়। সঙ্গের ছেলেটির সামনে কানাই সিগারেট খাবে না, এটুকু কি আর সে বোঝে না ! নরেশ কিন্তু গুরুতর খবর দেয়। কানাই নাকি সত্যই বিড়ি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভাল হয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে মেশে না। শুধু বিড়ি সিগারেট নয়, তাদেরও ত্যাগ করেছে। শুনে তখন খেয়াল হয়। পাকার । যে কানাই তার সঙ্গে ভাল করে কথা বলে নি, তাকে এতটুকু আমল দেয় নি। কানাই তার সঙ্গে মিশবে না ? নতুন বন্ধু পেয়েছে ? বহুৎ আচ্ছা, কেঁদে | কেঁদে সে মরে যাবে ! / দু’মিনিটের মধ্যে সে ভুলে যায় কানাইকে, একবার সাজঘর ঘুরে আসে, মালাইকার সিদ্ধেশ্বরের কাছে মালাই কিনে খায়, সিগারেট টানে, পান চিবোয়, মানুষের রকম দেখে, মানুষের সঙ্গে কথা বলে, ভেতরে বাইরে এখানে। সেখানে পাক খেয়ে বেড়ায়, ডুপি উঠলে একটা সিন স্টেজে উইংসের পাশে | দাড়িয়ে আর একটা সিন সামনে ভিড়ের মধ্যে দাড়িয়ে দ্যাখে। তার প্রাণ আনন্দে উচ্ছল, সেখানে তুচ্ছ সুখদুঃখের স্থান নেই। কেবল সে নয়, ছেলেবুড়ো সকলেই যেন এখানে আজ কি একটা গভীর লজ্জা ও দুঃখের, আত্মকৃত অপরাধের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে হাফ ছেড়েছে, আজকের সন্ধ্যার চরম কৰ্ত্তব্য হিসাবে আঁকড়ে ধরেছে এই উৎসবকে, সাময়িক ফঁাপানো আনন্দে মশগুল হয়ে যেতে। ছেলেরা চঞ্চল, একটু উচ্ছ স্বল, বড়রা একটু ( 8